Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রেপ্তারের সাত ঘণ্টা পর জামিনে জেলা জজ আদালতের নাজির

নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাবেক রেকর্ড কিপার (বর্তমানে জেলা জজ আদালতের নাজির) মো. আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ছবি: সংগৃহীত।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় সাত ঘণ্টার মাথায় জামিন পেয়েছেন নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের নাজির আলমগীর হোসেন। আজ সোমবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে শহরের কৃষ্ণরামপুর এলাকার বাড়ির সামনে থেকে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ তাঁকে গ্রেপ্তার করেন

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বেলা একটার দিকে নাজির আলমগীর হোসেনকে জেলা জজ আদালতে নেন দুদকের কর্মকর্তারা। বিকেল চারটার দিকে শুনানি শেষে জেলা জজ ছালেহ উদ্দিন আহমেদ আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জামিন পাওয়ার পর নাজির আলমগীর হোসেন দাবি করেন, দুদক তাঁর সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করতে বললে তিনি বিধি মোতাবেক তা দাখিল করেন। কিন্তু এরপরও দুদকের কর্মকর্তা তাঁকে বিভিন্নভাবে হয়রানি অব্যাহত রাখলে তিনি গত ৩১ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদকে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি নোটিশ দেন। তিনি বলেন, আইনি নোটিশে দুদককে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুদক কর্মকর্তা তাঁর বিরুদ্ধে কল্পকাহিনি সাজিয়ে মামলা করেন এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। এতে তাঁর সম্মানহানি হওয়ায় তিনি দুদকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও উল্লেখ করেন।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জেলা জজ আদালতের নাজির আলমগীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভিযোগেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলমগীরের এসব অপকর্মে সহযোগিতা করেন তাঁর স্ত্রী জুডিশিয়াল নাজির নাজমুন নাহার, বোন আফরোজা আক্তার ও বন্ধু বিজন ভৌমিক। মামলায় তাঁদেরও আসামি করা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমেদ বলেন, তাঁরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের আলোকে আদালতের একজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। এখন আদালত তাঁকে জামিন দিয়ে দিলে তাঁদের কিছু করার নাই।

আলমগীরের বিরুদ্ধে করা প্রথম মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে আলমগীরের স্ত্রী নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার নাজমুন নাহার, বোন আফরোজা আক্তার ও বন্ধু বিজন ভৌমিককে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত মোট ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। ওই সম্পদ ভোগদখল রেখে প্রতারণামূলকভাবে মানি লন্ডারিং-সম্পৃক্ত অপরাধ, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে লব্ধ অর্থের উৎস গোপনের লক্ষ্যে হেবা দলিল সম্পাদন, দলিলে জাল জালিয়াতি করেছেন। এ ছাড়া বেনামে সম্পদ অর্জন এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঐশী ট্রেডার্সের ব্যবসার আড়ালে মোট ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৬ টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন।

দ্বিতীয় মামলায় আসামি করা হয়েছে শুধু মো. আলমগীরকে। এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী হয়েও নাজিরের দাপ্তরিক পরিচয় গোপন করে ব্যবসা হিসাব দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব খুলে ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৬ টাকা লেনদেন করেছেন।
দুটি মামলাই করেছেন দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ।

দুদক সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলমগীর ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার হীরাপুর গ্রামের হাজি আবদুল মন্নানের ছেলে। তিনি ১৯৯৭ সালে ১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্টেনোগ্রাফার পদে যোগ দেন। এরপর সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমতে স্থাবর সম্পদের হিসাব অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিকের কাছে দাখিল করেন। ওই হিসাবে উল্লেখ করেন, গ্রামে তাঁর ও স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদ নেই, পৈতৃক বাড়িতে বসবাস করেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পরে দুদক অনুসন্ধানে নামে।

আরও পড়ুন
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার মামলায় নোয়াখালীতে আদালতের নাজির গ্রেপ্তার