Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্লাডিওলাসের রানি শাহানারা

আজ থেকে ২১ বছর আগে শাহানারা খাতুনের স্বামী শাহ আলম ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাঁকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত সফল হওয়া গেল না। জমি বন্ধক রেখে জোগাড় হলো পাঁচ লাখ টাকা। স্বামীকে নিয়ে ভারতে ছুটলেন শাহানারা। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। তিন-তিনটি সন্তানকে শাহানারার কাছে রেখে মারা গেলেন শাহ আলম। কাঁটা বিছানো জীবনের নতুন পথে হাঁটতে শুরু করলেন শাহানারা। অবলম্বন হিসেবে বেছে নিলেন নানা জাতের ফুলের চাষকে।

যশোরের ঝিকরগাছার শাহানারা খাতুন ফুল চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। প্রথম আলো

গ্রামের রাস্তার পাশে ১৫ শতক জমির ওপর সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন একতলা নতুন বাড়ি। বাড়িটি শাহানারার। ৪০ লাখ টাকা খরচ করে রাস্তার পাশে ১৫ শতক জমি কিনে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে পাকা বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। নিজের আছে ১০ বিঘা জমি। পাঁচ বিঘায় গোলাপ, তিন বিঘায় গ্লাডিওলাস ও গাঁদা ফুলের চাষ রয়েছে। ঘরভর্তি থাকে নানা ফুলের বীজ। এ ছাড়া সরিষা ও ধানের চাষ রয়েছে আরও দুই বিঘা জমিতে। এই সবকিছু নিয়ে শাহানারার সংসার।

কীভাবে শাহানারা জীবনকে এত দূরে টেনে নিলেন, শোনা যাক তাঁর মুখেই। ‘একুশ বছর আগে যখন স্বামী মারা যান, আমার ঘরে তখন খাবারও ছিল না। ছিল শুধু ১৫ বস্তা গ্লাডিওলাস ফুলের বীজ। সেটাই ছিল আমার সম্বল। সিদ্ধান্ত নিলাম এই বীজগুলোই জমিতে বুনব। এক বিঘা জমি ইজারা নিই। সেখানে বপন করি সেই বীজ। গ্রামবাসী এসে আমার পাশে দাঁড়াল। তাদের সহযোগিতায় ফুল বিক্রি করে সে বছর বেশ কিছু টাকা আসে হাতে। পরের বছর করি দেড় বিঘাতে, তারপরের বছর আড়াই বিঘায়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বামীর বন্ধকের জমি উদ্ধার করি। নিজেও কিনি নতুন জমি। এই তো কদিন আগেই মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিলাম।’ এ কথা বলতে বলতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে শাহানারার মুখ।

শুধু গ্রামবাসী নন, ফুল উৎপাদন যাঁরা করেন, তাঁদের সবার কাছে শাহানারা একটি আদর্শের নাম। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘শাহানারা আমাদের গর্ব। মানুষ শূন্য থেকে শুরু করে, তিনি করেছেন মাইনাস থেকে; বিভিন্ন সময়ে আমরা তাঁকে ফুল চাষের প্রযুক্তি দিয়েছি। তিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা ব্যবহার করেছেন। সরকারি সহায়তা পেলে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন।’

শাহানারাও চান না এখানে থেমে থাকতে। ইচ্ছা আছে দুই বিঘা জমিতে একটি শেড নির্মাণ করে জারবেরা ফুলের চাষ করার।

এই শাহানারাই অদম্য বাংলাদেশের মুখ। তাঁর হার না মানার প্রত্যয়েই প্রতিদিন জয়ী হচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি সেরা নারী কৃষক ক্যাটাগরিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন শাহানারা।