Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘরে থেকে নামাজ আদায়ের পরামর্শ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময়ে আবারও ঘরেই নামাজ আদায়ের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় না িগয়ে ঘরে বসেই প্রার্থনা করার কথা বলেছেন তিনি। একই পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও।

গতকাল রোববার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘শবে বরাতও সামনে। সে সময় আমি বলব, ঘরে বসে বসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাদের ভালো রাখেন। এবং দেশের মানুষ যেন আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে। এই মহামারির হাত থেকে যেন বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায়।’

এর আগে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গত ৩০ মার্চ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যাঁরা জুমা ও জামাতে যাবেন, তাঁরা সবাই সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। অজু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। বৈঠকে আলেমরা আরও বলেন, জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে। যাঁদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সর্দি, জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে, আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন এবং তাঁদের সংস্পর্শে গিয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বা বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু, যাঁরা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত এবং যাঁরা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন, তাঁদেরও মসজিদে না আসার অবকাশ আছে। ওই সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন আলেমের ই-মেইলে পাঠানো মতামত আলোচনা করা হয়।

জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমরা সব পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।’

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের খোঁজখবর নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, তাঁদের একটি অংশ মসজিদ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ঢাকার একটি এলাকায় প্রথম যে চারজন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এ ছাড়া তাঁদের অন্য কোনো সামাজিক মেলামেশার ইতিহাস পাওয়া যায়নি। এই চারজনের তিনজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। তাঁদের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছিলেন পরিবারের আরও তিন সদস্য। আইইডিসিআরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

আইইডিসিআরের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ঢাকারই আরেকটি জায়গায় আক্রান্ত হওয়া দুই ব্যক্তির মসজিদ এবং বাসা ছাড়া অন্য কোথাও যাতায়াত ছিল না। এঁদের একজনের কাছ থেকে পাঁচজন সংক্রমিত হয়েছেন। এ ছাড়া আরেকজন ব্যক্তির সংক্রমণের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে তাঁরা জানতে পেরেছেন, তাবলিগের চিল্লায় (৪০ দিনের কার্যক্রম) অংশগ্রহণ শেষে তিনি এক মাস আগে বাসায় ফেরেন। এরপর তিনি আর বের হননি। তাঁর সংক্রমণে কারা এসেছিলেন, সে বিষয়টি তাঁরা এখন সন্ধান করছেন।

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ দেশে বহু ধর্মের মানুষের বাস। তবে এই সময় হিন্দুরা মন্দিরে গিয়ে উপাসনা না করে ঘরে বসে করবেন। বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানরা বাড়িতে প্রার্থনার আয়োজন করবেন। এ দেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। জামাতের নামাজটা এই সময় মসজিদে না পড়ে বাড়িতে পড়বেন। এ সময় মসজিদ খোলা থাকলেও মানুষ যেন কম থাকে, এটা ইমাম সাহেবদের নজরে রাখতে হবে। যাঁরা আসবেন, তাঁরাও যেন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করেন, এটা দেখাটা জরুরি।’

২৩ চিকিৎসকের বিবৃতি

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সম্মিলিত প্রার্থনা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ২৩ বিশিষ্ট চিকিৎসক। গত শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, কোভিড-১৯-এর হাত থেকে মুক্ত থাকার প্রধান উপায় হচ্ছে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধি মেনে চলা। এ জন্য বিশ্বের সর্বত্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সমাবেশসহ জনসমাগম হতে পারে এমন সবকিছু বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিবৃতিতে চিকিৎসকেরা বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে মক্কা ও মদিনার মতো অতি পবিত্র নগরীতেও অনির্দিষ্টকালের জন্য দিনরাত কারফিউ জারি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় নেতাদের কেউ কেউ এবং স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ধর্মীয় সমাবেশ স্থগিত না করে তা অব্যাহত রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁরা উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে মুসলিমদের তাবলিগ জামাত ও জামাতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চার্চের প্রার্থনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার ঘটেছে।

 এ রকম বাস্তবতায় চিকিৎসকেরা আপত্কালীন ব্যবস্থা হিসেবে গণসংক্রমণ প্রতিরোধে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সম্মিলিত প্রার্থনা বন্ধ রাখার দাবি জানান। বিবৃতিতে সই করেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রওশন আরা বেগম, ডায়াবেটিস গবেষক আবু সাঈদ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ আশরাফুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী, পুষ্টিবিদ আক্তার বানু, শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ কাজী রকিবুল ইসলাম, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বিলকিস বেগম চৌধুরী প্রমুখ।