Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘরে বন্দী স্কুলছাত্রী

দশম শ্রেণীতে পড়ে মেয়েটি৷ বয়স ১৫৷ বাবা নেই, মায়ের সঙ্গে গ্রামের বািড়তে থাকে। গত বছরের জুলাইয়ে এক প্রতিবেশী তরুণ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে৷ চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেয় সে৷ এর পর থেকেই ঘরে বন্দী হয়ে আছে মেয়েটি৷
পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনায় কিশোরীর ভাই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলেও আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ অভিযুক্ত তরুণের বাবা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে মেয়েটির পরিবার অভিযোগ করেছে৷
মামলার এজাহার সূত্রে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার ভাইবোনের মধ্যে ওই কিশোরী সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। দুই ভাই ঢাকায় কলেজে পড়ালেখা করে৷ তাই মায়ের সঙ্গে গ্রামের বািড়তেই থাকে সে। হঠাৎ করেই সে প্রতিবেশী সেলিম রেজার ছেলে মিম মোল্লার নজরে পড়ে৷ তাকে বাড়িতে একা থাকায় মিম প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। গত বছরের ২৯ জুলাই রাতে সে তার ঘরে টেলিভিশন দেখছিল। এ সময় মিম তাকে একা পেয়ে সুরুজ মোল্লা নামে অপর এক যুবকের মাধ্যমে পাশের বািড়তে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। লজ্জায় মেয়েটি বিষয়টি গোপন করে। পরে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে৷ এ অবস্থায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ তার একটি কন্যাসন্তান হয়৷
ঘটনাটি জানাজানি হলে পরদিন ২৮ মার্চ সালিস বৈঠকে গ্রাম্য প্রধান ও মানিকহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাস মোল্লাসহ স্থানীয় লোকজন ওই কিশোরীর সঙ্গে মিমের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মিমের পরিবার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইলেও কিশোরীকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়৷ ফলে বৈঠকে এর সমাধান হয়নি৷ পরে কিশোরীর ভাই বাদী হয়ে মিম ও সহযোগী সুরুজকে আসািম করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
কিশোরীর ভাইয়ের অভিযোগ, মিমের বাবা রেলওয়ে পুলিশে চাকরি করেন। তিনি পুলিশি প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন। ফলে সুজানগর থানা পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপর নয়৷
গত মঙ্গলবার বাড়িতে গেলে টিনের একটি ভাঙা ঘরে শিশুটিকে নিয়ে ওই কিশোরীকে বসে থাকতে দেখা যায়৷ কিশোরী প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি কোনো অন্যায় করি নাই। তার পরেও আমি ঘরে বন্দী। সামনে আমার পরীক্ষা৷ কিন্তু স্কুলে যেতে পারছি না। বাইরে গেলেই লোকজন নানান কথা বলে। আপনারা আমার স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। বাচ্চাটার বাবার পরিচয় মিলায়ে দেন।’ গ্রাম্য প্রধান আব্বাস মোল্লা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ছেলের বাবা সমাধান করতে চাননি৷ তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা কিছু করতে পারছি না।’
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান বলেন, কিশোরীর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। পুলিশ তৎপর হয়ে ছেলে ও তার বাবাকে খুঁজে বের করলে সমস্যার সমাধান হবে৷
কিশোরীর প্রতিবেশী জাহিদুর রহমান বলেন, ‘মিম ঢাকার একটি কলেজে লেখাপড়া করছে৷ ঘটনার পর থেকেই ওরা সপরিবারে ঢাকায় চলে গেছে৷’
সুজানগর থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, সহযোগী সুরুজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ অন্যরা পালাতক রয়েছেন৷