Thank you for trying Sticky AMP!!

চড়ুইয়ের প্রাণ বাঁচাতে ছুটে এল ফায়ার সার্ভিস

রাজশাহীতে চড়ুই পাখি উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের অভিযান। ছবি: সংগৃহীত

লম্বা মই দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন ওপরে উঠছিলেন, তখন রাস্তার মানুষ সব দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা আগুন খুঁজতে থাকেন। কোথাও আগুন নেই। সবাই অবাক হয়ে দেখেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিদ্যুতের তারে নাটাই ছেঁড়া একটা ঘুড়ি খুলে আনছেন। যাতে ঝুলে ছিল একটি চড়ুই পাখি। 

এমন উদ্ধারকাজ দেখে কেউ বললেন, মহৎ কাজ। কেউ আবার হাসতে হাসতে হাঁটা শুরু করলেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী নগরের আলুপট্টির মোড়ে এভাবেই একটি চড়ুই পাখিকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় সাংবাদিক সৌরভ হাবিবের। প্রথমে তিনি পাখিটিকে সুতা থেকে ছাড়ানোর কথা ভাবেন। কিন্তু আশপাশে লম্বা কোনো বাঁশ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই কিছুটা সংশয় নিয়েই ফোন করেন ফায়ার সার্ভিসে। ভাবছিলেন, ছোট্ট একটা পাখির প্রাণ বাঁচাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসবেন কি না।

কিন্তু ফোন পাওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি। সৌরভ হাবিব ভাবেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হয়তো চড়ুই পাখির কথা বুঝতে পারেননি। তাই দুটি গাড়ি এনেছেন। তিনি তাঁদের বলেন, তিনি কিন্তু চড়ুই পাখিকে উদ্ধার করার কথা বলেছেন। আগুনের কথা বলেননি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁকে বললেন, চড়ুই পাখির কথা জানতে পেরেই তাঁরা এসেছেন। এরপর লম্বা মই দিয়ে উঠে বৈদ্যুতিক তার থেকে সুতাটি কেটে দেন তাঁরা। তখন দুপুর ১২টা বেজে ১০ মিনিট। সঙ্গে সঙ্গে আকাশে উড়াল দেয় ছোট্ট পাখিটি। এভাবেই বলছিলেন সাংবাদিক সৌরভ হাবিব, ‘আমি তো ভয়ে ভয়ে ফোন দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, তাঁরাও তাচ্ছিল্য করবেন কি না। কিন্তু তাঁরা অবহেলা করেননি। অথচ একটা সময় ছিল যখন মানুষ মরতে থাকলেও এত দ্রুত ফায়ার সার্ভিস আসত না। এখন তাঁরা খুব আন্তরিক। পাখিটিকে মুক্ত করে তাঁরা এটি প্রমাণ করলেন।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ফরহাদ হোসেন বলেন, পাখির একটি পায়ে সুতা আটকে ছিল। তাঁদের দুটি ইউনিট পাখিটি মুক্ত করার অভিযানে নেমেছিল। স্টেশন অফিসার মেহেরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫ জন সদস্য একযোগে কাজ করে পাখিটিকে মুক্ত করেছেন।

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস এখন দ্য লাইফ সেভিং ফোর্স। শুধু মানুষই নয়, প্রত্যেকটা প্রাণেরই মূল্য আছে। প্রতিটি প্রাণ রক্ষা আমাদের কর্তব্যের ভেতরেই পড়ে। বিষয়টি এভাবে মাথায় নিয়েই আমরা কাজ করি। ছোট্ট চড়ুই পাখিটিকে মুক্ত করতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।’

পাখির প্রতি সবার এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি অনু তারেক। তিনি বললেন, ‘কেউ পাখি মারলে সেখানে পুলিশ ডাকা হলে লোকজন হাসাহাসি করে। বলে, পাখি মরলে কী হবে! ঠিক এই সময়ে পাখির প্রাণ রক্ষায় ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করা এবং ফায়ার সার্ভিসের এই ভূমিকা সবার জন্য অনুকরণীয়।’