Thank you for trying Sticky AMP!!

চতুর্থ প্রজন্মের বড়িতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম

অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী

জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে অনেক দম্পতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমেও রয়েছে স্থবিরতা। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতিষ্ঠান অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী

প্রশ্ন

দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বহু বছর ধরে প্রায় এক জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেক দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন না। এর কারণ কী?

সামিনা চৌধুরী: সচেতনতার অভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়টি এক জায়গায় আটকে আছে। এর কারণ হচ্ছে, এক. দম্পতিরা সহজে সেবা পাচ্ছেন না বা যখন চাইছেন তখন পাচ্ছেন না। দুই. কোন পদ্ধতি তাঁর জন্য ভালো হবে, সে আস্থার জায়গাটি তৈরি করা যায়নি। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অনেকে নিয়মিত নন। অথচ পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে বছরে একবার ভুল হয়ে গেলেই গর্ভধারণ হয়ে যায়। তাই মাতৃস্বাস্থ্য ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের উপকারিতা তুলে ধরে এতে উদ্বুদ্ধ করতে কাউন্সিলিং এবং মুঠোফোন ও অনলাইনে ব্যাপক হারে প্রচারের প্রয়োজন। এ ধরনের কাউন্সিলিংয়ের জন্য ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি করে কাউন্সিলর পদ সৃষ্টির আবেদন জানিয়েছে ওজিএসবি। প্রসূতি ও তাঁর স্বামীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সুফল তুলে ধরে আস্থা জোগাবেন কাউন্সিলররা।

প্রশ্ন

জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণের দায়িত্ব নারীর ওপরই কেন বেশি চাপানো হয়?

সামিনা চৌধুরী: জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো নারীকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে স্বামী বা পরিবারের ওপর নির্ভর করতে হয়। কোন পদ্ধতি গ্রহণ করবে, কোনটি করবে না, তা নারীদের মতামতের ওপর নির্ভর করে না। এটা পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থারও প্রভাব।

প্রশ্ন

জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি বেশি কার্যকর ও নিরাপদ?

সামিনা চৌধুরী: নিয়ম মেনে খাওয়ার বড়ি খেলে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি। অনেকে খাওয়ার বড়ি খেলে মাথাব্যথা, বমি ভাব, ওজন বেড়ে যাওয়ার যেসব অভিযোগ করেন, তা চতুর্থ প্রজন্মের বড়ি খেলে খুব কমই হয়। চতুর্থ প্রজন্মের বড়িতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন স্বল্পমাত্রায় থাকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম দেখা দেয়।

প্রশ্ন

কাদের জন্য খাওয়ার বড়ি নিরাপদ নয়?

সামিনা চৌধুরী: ৪০ বছরের বেশি বয়সী যেসব নারীর ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের খাওয়ার বড়ি খেতে নিষেধ করেন বেশির ভাগ চিকিৎসক। তবে হুট করে খাওয়ার বড়ি খেতে নিষেধ না করে চিকিৎসকদের উচিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসা সক্ষমতা মানদণ্ড অনুসরণ করে পরামর্শ দেওয়া। কারণ, এই বয়সে যাঁরা মা হতে চান না, তাঁদের জন্য হঠাৎ গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। সেটিও মাথায় রাখতে হবে।

প্রশ্ন

অনেক দম্পতির মনে শঙ্কা কাজ করে যে খাওয়ার বড়ি খেলে পরবর্তী সময়ে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। আসলেই কি তাই?

সামিনা চৌধুরী: সাধারণত নিয়মিত খাওয়ার বড়ি খেলে গর্ভধারণে কোনো সমস্যা হয় না। খাওয়ার বড়ি বন্ধ করার কয়েক মাসের মধ্যে
নারীরা ইচ্ছে করলে গর্ভধারণ করতে পারেন। তবে কোনো নারী গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে গর্ভবর্তী হওয়ার তিন মাস আগে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি থেকে নবজাতকের জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

প্রশ্ন

তাহলে কি খাওয়ার বড়ির পাশাপাশি আলাদা ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে?

সামিনা চৌধুরী: এ সমস্যার সমাধানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৯ ও ২০১১ সালে ফলিক অ্যাসিড মেটাবোলাইটসমৃদ্ধ চতুর্থ প্রজন্মের দুটি সম্মিলিত জন্মবিরতিকরণ বড়ির অনুমোদন দিয়েছে। এটা নারীর দেহে ফলিক অ্যাসিডের আদর্শ মাত্রা বজায় রাখে। ফলে ফলিক অ্যাসিড মেটাবোলাইটসমৃদ্ধ বড়ি খাওয়ার সময় আলাদাভাবে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হবে না। এই খাওয়ার বড়ি বন্ধ করার অল্প সময়ের মধ্যেই নিরাপদভাবে গর্ভধারণ করা সম্ভব।