Thank you for trying Sticky AMP!!

চলছে দুই সিটির 'অভিভাবক' নির্বাচনের ভোট

রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন নারী ভোটারেরা। ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

জমজমাট প্রচার-গণসংযোগ, ভোটারের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীদের বিরামহীন ছোটাছুটি। দলের প্রার্থীর জন্য কর্মীদের দৌড়ঝাঁপ। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে উৎসবে মাতেন প্রার্থী–ভোটাররা। তবে শঙ্কাও ছিল, এখনো আছে, শেষ পর্যন্ত ভোটটা সুষ্ঠুভাবে হবে তো। ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন তো।

আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে রাজধানী ঢাকার দুই সিটির পরবর্তী ‘অভিভাবক’ বেছে নিতে ভোট দেওয়া শুরু করেছেন ভোটাররা। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। দুই সিটিতে দুজন মেয়র, ১২৯ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৪৩ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন ভোটাররা।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে ইভিএম প্রযুক্তিতে। প্রথমবারের মতো ব্যালটে সিল মারাবিহীন পুরো একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। শুক্রবারই কঠোর নিরাপত্তায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোটকেন্দ্রগুলোতে মক ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

নিরাপত্তাকর্মীরা অবস্থান করছেন কেন্দ্রে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও বলেছেন, তিনি কখনো পক্ষপাতমূলক নির্বাচন করেননি, এবারও করবেন না। ইভিএমে কোনোভাবেই কারচুপির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও বিএনপি গতকাল শুক্রবারও ইভিএমে ভোট নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে।

এবারের সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৭৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৪টি। ঢাকা দক্ষিণে ৭ জন মেয়র পদের জন্য লড়ছেন। কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী হয়েছেন ৮২ জন। দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড। ঢাকায় ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা উত্তর সিটির ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষ রয়েছে ৬ হাজার ৫৮৮টি।

এবার ঢাকা উত্তরে ৮২৬ আর দক্ষিণে ৭২১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও নজরদারি থাকবে। ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটের ফলাফল ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণার জন্য এক ঘণ্টাই যথেষ্ট বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দেওয়ার নির্দেশিকা। ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

ভোটকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে থাকবে কড়া নিরাপত্তা। যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। তবে কিছু যানবাহন চলতে পারবে অনুমতি সাপেক্ষে। জরুরি বাহন এর আওতামুক্ত থাকবে। সদরঘাটে নৌ চলাচলও শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার থাকছে ভোটের নিরাপত্তায়।

সিটি নির্বাচন এবার নানা দিক থেকে ছিল আলোচিত। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সমান তালে প্রচার চালিয়েছেন। ব্যাপক ধরনের ধরপাকড়, হামলার অভিযোগ অন্যবারের চেয়ে কম ছিল। বিএনপির দুই মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ছাড়া বিএনপি থেকেও বড় কোনো অভিযোগ ছিল না। দুই দলের কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও বলেছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁদের বড় পাওয়া সবাইকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারা।

প্রধান চার প্রতিদ্বন্দ্বী আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, শেখ ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন তাঁদের প্রচারে অকপটে স্বীকার করেছেন, ঢাকার অবস্থা খুব ভালো নয়। তাঁরা ঢাকাকে বাঁচাতে চান। এ ছাড়া গত বছরের ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা নিয়ে চারজনই কথা বলেছেন। ডেঙ্গু রোগপ্রতিরোধে তাঁরা মশকনিধনের কার্যক্রমকে নিজেদের ইশতেহারে প্রাধান্য দিয়েছেন।

ভোটারের রায়েই নগরের অভিভাবক নির্বাচিত হবেন। জয়ের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ আশাবাদী। তাদের প্রার্থীরা প্রচারেও তা বলে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের করা এক জরিপের ফল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে বলেছেন, দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের বিপুল জয় হবে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটারদের সারি। ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: মোশতাক আহমেদ

বিএনপি বলছে, মানুষ ভোট দিতে পারলে তাদের প্রার্থীরাই জয়ী হবেন। তবে তাদের আশঙ্কা, গত সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোট কারচুপি হবে। এ ছাড়া ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের ব্যাপারে শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিএনপি। দলটির আশঙ্কা, সরকারদলীয় ব্যক্তিরা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করবেন।

ভোটের প্রচার এবার বেশ জমজমাট ছিল। মাথা ছুঁই ছুঁই করে লাগানো পোস্টারে ছেয়ে আছে পুরো রাজধানী। প্রায় সব প্রার্থীই তাঁদের পোস্টার প্লাস্টিক দিয়ে লাগিয়েছেন। পোস্টারের এমন ব্যবহার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এসব পোস্টার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলেও জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।

চিরচেনা গানের সুরে প্রার্থী ও প্রতীকের স্তুতি বসিয়ে বানানো নির্বাচনী গান ভোটের প্রচারে অন্য মাত্রা পেয়েছে। ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীবাসীকে এসব গান শুনতে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সরব ছিলেন নিজেদের প্রচারে। সব মিলিয়ে ঢাকাবাসী এবার তুলনামূলক ভালো নির্বাচনী পরিবেশ পেয়েছে। এখন অপেক্ষার সুষ্ঠু ভোট ও নির্বাচিত অভিভাবকের।