Thank you for trying Sticky AMP!!

চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্রাণ হারালেন খুবির সাবেক শিক্ষক

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

চলন্ত ট্রেনে দৌড়ে উঠতে গিয়ে হাত ফসকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া (৬৬)। আজ শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

মিজানুর রহমান ভূঁইয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন।

দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা জিআরপি (রেলওয়ে) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে দৌড়ে খুলনা স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বেনাপোলগামী চলন্ত ট্রেন বেতনা এক্সপ্রেসে (সাবেক বেনাপোল কমিউটার) ওঠার চেষ্টা করেন তিনি। ট্রেনে প্রায় উঠেও পড়েন। কিন্তু ট্রেনের দরজার হাতল ধরে রাখতে পারেননি। দৌড়ে আসার কারণে হয়তো হাঁপিয়ে গিয়েছিলেন। হাত ফসকে তিনি ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে পড়ে যান। এ সময় ট্রেনে তাঁর ডান হাত ও পা কাটা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও আশপাশের লোকজন তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান বলেন, প্রতিদিন সকালে তিনি প্রাতর্ভ্রমণে বের হতেন। শনিবার বন্ধুদের সঙ্গে কমিউটার ট্রেনে করে যশোরের ঝিকরগাছার গদখালিতে ফুলবাগান দেখতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।

মিজানুর রহমান ভূঁইয়া কর্মজীবনে জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন ও সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও আরও অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, খুলনা বিভাগের সহসভাপতিও ছিলেন।

পরে শনিবার বাদ যোহর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের সামনে জানাজা শেষে শিক্ষকের মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের দেওভোগে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজায় বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধানসহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।

খুলনা বিশ্ববিদালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান শিক্ষক মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন মো. রায়হান আলী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার খান গোলাম কুদ্দস, সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স ডিসিপ্লিন প্রধান খন্দকার কুদরতে কিবরিয়া, শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশসহ সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শোক প্রকাশ করেছেন।

এদিকে শিক্ষকের এমন মৃত্যুর পর খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনের অবকাঠামো ত্রুটি নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। প্ল্যাটফর্ম নিচু হওয়ায় ট্রেনের বগি ও প্ল্যাটফর্ম যাতে সমান থাকে, সেই দাবিতে রেলস্টেশন উদ্বোধনের আগে ও পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি, অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে খুলনার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও নাগরিক সংগঠন। এ বিষয়ে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, আধুনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ চলার সময় থেকেই কর্মকর্তাদের বারবার বলা হয়েছে, ট্রেনের বগি ও প্ল্যাটফর্ম যাতে সমান থাকে। পরে এ নিয়ে নানা ধরনের কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো দাবিই মানা হয়নি। প্ল্যাটফর্ম নিচু হওয়ায় চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ থেকেই গেছে।