Thank you for trying Sticky AMP!!

চলে গেছেন শ্রমিকেরা, পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ

>

পাথর তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলছে স্থানীয় প্রশাসনের মাইকিং। গতকাল দুপুরে শাহ আরেফিন টিলায়। ছবি: প্রথম আলো

এক দশক পর শাহ আরেফিন টিলা পাথরখেকোদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তিন দিনের প্রচেষ্টায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ গর্তশ্রম থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিককে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর গতকাল দুপুরে শাহ আরেফিন টিলায় পাথর তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মাইকিং করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

২০০৯ সাল থেকে পাথর উত্তোলন করতে যত্রতত্র গর্ত আর খোঁড়াখুঁড়িতে টিলার অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। টিলা বলতে শুধু নামটিই আছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করায় একের পর এক গর্তধসে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছিল। শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়ার পর পাথর তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় এক দশক পর শাহ আরেফিন টিলা মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

যোগাযোগ করলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য প্রথম আলোকে শাহ আরেফিন টিলা শ্রমিকমুক্ত এবং পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো থেকে একটি পক্ষ শাহ আরেফিন টিলার একাংশ বন্দোবস্ত এনেছিল। ভুল তথ্য দিয়ে বন্দোবস্ত আনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন করলে উচ্চ আদালত ওই বন্দোবস্ত স্থগিত রাখার আদেশ দিয়েছেন। গত সোমবার রাতে আদালতের আদেশটি প্রশাসনের হাতে পৌঁছানোর পর মাইকিং করে পাথর তোলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রশাসনের ভূমিসংশ্লিষ্ট শাখা জানায়, ‘বশির অ্যান্ড কোং’–এর পক্ষে মোহাম্মদ আলীর করা একটি রিট উচ্চ আদালতে ছিল। পূর্ববর্তী আদেশ আদালত স্থগিত করায় শাহ আরেফিন টিলায় যেকোনো পন্থায় পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এখন বহাল থাকল। এ বিষয়টি মাইকিং করে গতকাল প্রচার করা হয়েছে। 

গতকাল বেলা দুইটার দিকে ইউএনওর উপস্থিতিতে ভূমিসংশ্লিষ্ট শাখার সদস্যরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মাইকিং করে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি ঘোষণা করেন। ২০০৯ সালের পর শাহ আরেফিন টিলা এবারই প্রথম শ্রমিকমুক্ত হয়েছে। আর পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ ঘোষণায় মাইকিংও হয়েছে প্রথম।

উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শাহ আরেফিন টিলা। সরকারি খাস খতিয়ানের ১৩৭ দশমিক ৫০ একর টিলাভূমির জায়গা এখন প্রায় সমান্তরাল। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি কমিটির মাধ্যমে ২০১৫ সালে পাথর লুটের তথ্য দেয়। তাতে বলা হয়, ৯৬ দশমিক ২৫ একর জায়গার ৭০ ভাগ টিলা ধ্বংস হয়েছে। টিলা কেটে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ঘনফুট পাথর লুটপাট হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পাথর তুলতে গিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রমিকদের টিলা এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই এলাকায় খোঁড়া গর্তের আশপাশে ২৬টি শ্রমিকদের অস্থায়ী বসতি ও কিছু যন্ত্রের স্থাপনাও অপসারণ করা হয়েছে। 

শাহ আরেফিন টিলার আগে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি এলাকার কালাইরাগ সাদাপাথর এলাকা থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পাথরশ্রমিকদের সরিয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পরদিন থেকে শাহ আরেফিন টিলা এলাকা থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেখান থেকে পাঁচ হাজার পাথরশ্রমিককে সরিয়ে দেওয়ার পর পাথর তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ওই উপজেলার দুটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এখন পুরোপুরি মুক্ত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।