Thank you for trying Sticky AMP!!

চামড়াশিল্প নগর বন্ধের সুপারিশ

কমিটি বলছে, চামড়াশিল্প নগর থেকে দিনে ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য নদীতে যাচ্ছে। পরিবেশদূষণ কমানোর লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ না হওয়ায় সাভারের চামড়াশিল্প নগর বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সংসদীয় কমিটি মনে করে, বর্জ্য পরিশোধনের সঠিক ব্যবস্থা করার পর শিল্পনগরটি আবার চালু করা যেতে পারে।

জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে গতকাল সোমবার এ সুপারিশ করা হয় বলে জানান কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি আরও জানান, চামড়াশিল্প নগর বন্ধের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) চিঠি দিতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

চামড়াশিল্প নগরের ট্যানারিতে উৎপাদিত বর্জ্য পরিশোধনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ধলেশ্বরী নদীদূষণের কবলে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ কারণে সংসদীয় কমিটি এই সুপারিশ করেছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ কমাতে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সরিয়ে নিতে ২০০৩ সালে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়ন করছে বিসিক। ২০১৭ সালে হাজারীবাগে ট্যানারিগুলোর গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সাভারে যেতে বাধ্য করা হয়। তবে সেখানে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) কার্যকরভাবে চালু না হওয়ায় শুরু থেকেই নদীদূষণের অভিযোগ আসছিল।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, চামড়াশিল্প নগরে প্রতিদিন ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। বিপরীতে সিইটিপির পরিশোধন সক্ষমতা দিনে ২৫ হাজার ঘনমিটার। সে হিসাবে প্রতিদিন ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় নদীতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শিল্পনগরে ক্রোমিয়াম (অত্যন্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক) ব্যবস্থাপনা চালু হয়নি।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি আরও বলেন, দূষণ কমানোর জন্য চামড়াশিল্প নগর করা হয়েছিল। কিন্তু অবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা যায়। কিন্তু এখন যে পর্যায়ে চলে গেছে, তাতে আর জরিমানা করে সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করে কমিটি। এ জন্য তাঁরা ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।

* ২০০৩ সালে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প নেওয়া হয়। জমি পেয়েছে ১৫৫টি ট্যানারি। * বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে বিসিক। * বিনিয়োগের টাকা ফেরত দিলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে, বলছেন ট্যানারিমালিকেরা।

চামড়াশিল্প নগরে ১৫৫টি ট্যানারিকে জমি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরি করে দেওয়ার কথা বিসিকের। তারা এ জন্য একটি চীনা কোম্পানিকে নিয়োগ দেয় ২০১২ সালে। তবে তারা যথাসময়ে সিইটিপি তৈরি করতে পারেনি। আবার এই সিইটিপির সক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর ডিসেম্বরে নদীদূষণের দায়ে চামড়াশিল্প নগরকে ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা জরিমানাও করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিল্পসচিব ও বিসিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। চামড়াশিল্প নগর প্রকল্পের পরিচালক জীতেন্দ্রনাথ পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। তারা আমাদের জানালে আলাপ–আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

চামড়াশিল্প নগরের উদ্যোক্তারা বলছেন, তাঁরা শিল্পনগরে আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সিইটিপি কার্যকর না হওয়ায় তাঁরা ইউরোপের বাজারে ভালো ক্রেতার কাছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিইটিপি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায় আমাদের নয়। বিসিক আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে চামড়াশিল্প নগর অপ্রস্তুত অবস্থায় ট্যানারিগুলোকে সেখানে যেতে বাধ্য করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংকঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছি। যে দোষ আমাদের নয়, তার দায় আমরা নিতে চাই না। বিনিয়োগের অর্থ দিয়ে দিলেই আমরা কারখানা বন্ধ করে চলে আসব।’

বনের জমি উদ্ধার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গতকালের বৈঠকে জানায়, বন বিভাগের জমির মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বেদখলে ছিল। এর মধ্যে গত ১১ মাসে ৫ হাজার ৬৩৯ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। বন অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী দুই বছরে আরও ২০ হাজার একর জমি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে বন বিভাগের জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের ১৩টি উচ্ছেদ মামলা, নিম্ন আদালতে ৮৫২টি দেওয়ানি মামলা, উচ্চ আদালতে ১১২টি রিট এবং উচ্চ আদালতে ৮৭টি আপিল/মিস মামলা চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধার করা জমিতে বনায়ন করা হয়েছে। এ জন্য কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এর সদস্য পরিবেশন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, সাংসদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, রেজাউল করিম, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও শাহীন চাকলাদার অংশ নেন।