Thank you for trying Sticky AMP!!

চাষের মাছে পুষ্টির চাহিদা মিটছে না

>

• ২০১৭ সালে দেশে মাছের মোট উৎপাদন ৪১.৩৪ লাখ মেট্রিক টন
• একই বছর প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন ১০ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন
• সিংহভাগ মানুষকে মূলত চাষের মাছের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে
• চাষের মাছে পর্যাপ্ত অণু পুষ্টিকণা থাকে না
• শিশু ও নারীদের মধ্যে অপুষ্টি বেশি
• অপুষ্টি দূর করতে দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে

চাষের মাছে দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মিটছে না। এই মাছে আমিষ থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ, লৌহ, আয়োডিন, জিঙ্কের মতো অণু পুষ্টিকণা থাকে না। গবেষকেরা বলছেন, প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়ানো গেলে এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি অনেকটা মেটানো সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স নামের উন্মুক্ত বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘হাইয়ার ফিশ বাট লোয়ার মাইক্রোনিউক্রিয়েন্ট ইনটেকস: টেম্পোরাল চেঞ্জেস ইন ফিশ কনজাম্পশন ফ্রম ক্যাপচার ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণা নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। নিবন্ধটি গত বছর প্রকাশিত হয়।

২০১৭ সালে দেশে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন। যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ মেট্রিক টন; অর্থাৎ সিংহভাগ মানুষকে মূলত চাষের মাছের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০১০ সালে দেশের মানুষের প্রাকৃতিক মাছ খাওয়ার পরিমাণ ৩৩ শতাংশ কমেছে। শুধু দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই এই ধারা দেখা যাচ্ছে। বলা হয়েছে, পরিবেশদূষণ, জলাশয় দখলসহ নানা কারণে প্রাকৃতিক মাছের প্রজননস্থল ধ্বংস হচ্ছে, মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে, মাছ উৎপাদনও কমছে।

গবেষকেরা বলছেন মাছে চর্বি, উচ্চমানের ভিটামিন ও খনিজ থাকে। মানুষের স্বাস্থ্য, বিকাশ, চিন্তাশক্তি ও রোগ প্রতিরোধে এসবের বড় ভূমিকা আছে। কিন্তু চাষের মাছে উচ্চমানের প্রোটিন থাকলেও অন্য উপাদান কম থাকে। সে কারণে মানুষের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ছোট মাছের মাংস থেকে শুরু করে মাথা ও কাঁটা-সবই খাওয়া যায়। ছোট মাছে লৌহ, জিঙ্ক, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম-এসব অণু পুষ্টিকণা বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট আছে।

বিশ্বে পুষ্টি প্রাপ্তিতে যেসব দেশ তলানির দিকে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) দলিলে বলা হয়েছে, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে উচ্চমাত্রায় অপুষ্টি আছে। এদের বয়সের তুলনায় ৩৬ শতাংশের উচ্চতা কম, ১৪ শতাংশ কৃশকায় ও ৩২ শতাংশের ওজন কম। ওই দলিলে দাবি করা হয়েছে, গত তিন দশকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

২০১১-১২ সালের খানা জরিপের তথ্য উদ্ধৃত করে গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, স্তন্যদান করছেন না বা অন্তঃসত্ত্বা নন বাংলাদেশে এমন প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ৫৭ শতাংশ জিঙ্কের ঘাটতিতে ভুগছেন। ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতিতে ভুগছেন ২২ শতাংশ, লৌহের ঘাটতিতে ভুগছেন ৭ দশমিক ১ শতাংশ ও ভিটামিন এ-এর ঘাটতিতে ভুগছেন ৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।

এই গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক কাজি আলি তৌফিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার একসময় শুধু নদী-নালার মাছ নিয়ে কথা বলত। এখন বলে শুধু চাষের মাছের কথা। উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর তেমন কোনো প্রকল্প বা পরিকল্পনা সরকারের নেই। সরকার চাইলে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়াতে পারে। তার উদাহরণ, সরকার–ই পরিকল্পনা করে ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু ইলিশ দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে।

প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কি না-জানতে চাইলে ঢাকা জেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, দেশে ৪৩২টি অভয়াশ্রম প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবছরই উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে। রুই ও কাতলের পাশাপাশি ছোট মাছের পোনা ছাড়ার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।