Thank you for trying Sticky AMP!!

চিকিৎসাধীন ছয় শিক্ষার্থী নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক

>

• রোববার বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও ১২ জন আহত হয়
• আহত ১২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জন এখনো চিকিৎসাধীন
• দুজনের হাত ভেঙেছে, একজনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত
• তিনজনের মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে
• সিএমএইচে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা সবাই আশঙ্কামুক্ত
• আহত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার

কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় আহত ছাত্রদের ছয়জন এখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। তারা সবাই শহীদ বীর বিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুই ছাত্রের হাত ও পা ভেঙে গেছে, একজনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই ছাত্রীর মাথায় এবং বাকি দুজনের হাত ও পায়ে আঘাত লেগেছে।

জাবালে নূর পরিবহনের সেই বাস। ফাইল ছবি

আহত এই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত তাদের দুশ্চিন্তা কাটছে না। পরিবারের লোকজন বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, যাতে আর কোনো বাসচালক বেপরোয়া বাস চালানোর ধৃষ্টতা না দেখান।

চিকিৎসকেরা বলেছেন, সিএমএইচে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা সবাই আশঙ্কামুক্ত। তবে তাদের সেরে উঠতে সময় লাগবে। সিএমএইচে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা হলো, রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস, সজীব শেখ, মেহেদি হাসান ওরফে সাগর ও রাহাত গাজী এবং একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের রুবাইয়া আক্তার ও বিজ্ঞান বিভাগের নাইম রহমান।

গত রোববার দুপুরে কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৯২৯৭) রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও ১২ জন আহত হয়। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম (১৬)। আহত ছয়জনকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। আহত অন্যদের মধ্যে গত মঙ্গলবার দুজন, বুধবার একজন ও গতকাল বৃহস্পতিবার একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লে. কর্নেল মো. ছগির মিয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর আহত শিক্ষার্থীদের প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। দুই-এক দিন পর পর আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে তিনি সিএমএইচে যাচ্ছেন। সেখানে থাকা সব শিক্ষার্থী এখন আশঙ্কামুক্ত। তবে তাদের সেরে উঠতে সময় লাগবে। তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থী মেহেদি হাসানের চোখের কর্নিয়ায় কাচের আঘাত লেগেছে। তার চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

মেহেদি হাসানের বড় ভাই মো. সোলায়মান প্রথম আলোকে বলেন, চালক বেপরোয়া বাসটি চালিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা দিলে বাসের কাচ ভেঙে রাস্তার পশে দাঁড়িয়ে থাকা মেহেদির চোখে লাগে। আশা ছিল, ‘মেহেদি সেনাবাহিনীর অফিসার হবে। মনে হচ্ছে, ওর লাইফটাই শেষ হয়ে গেল।’

সিএমএইচ থেকে ছাড়া পেয়েছে সোহেল রানা



সজীব শেখের ডান কনুই ভেঙে গেছে। সজীবের মা প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের ভাঙা কনুইতে রড ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। বাসা থেকে সুস্থ অবস্থায় বেরিয়ে তাঁর ছেলেকে হাসপাতালে যেতে হলো। তিনি এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন, এখন তাঁর ছেলে কীভাবে ভালো হয় সেই ব্যবস্থা করতে।

শিক্ষার্থী রাহাত গাজীর ডান হাতের আঙুল কেটে গেছে এবং নাইম রহমানের শরীরের একাধিক স্থানে জখম হয়েছে।

জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দ্বাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তৃষ্ণা রানী দাসের ডান হাত ভেঙে গেছে। তার ভাই রাজন চন্দ্র দাস বলেন, চিকিৎসকেরা তৃষ্ণার ভাঙা পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন। ডান পায়ে আঘাত লেগেছে। তৃষ্ণা এখনো দাঁড়াতে পারছে না। তৃষ্ণাকে নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। রাজন চন্দ্র দাস আরও বলেন, তৃষ্ণার হাত-পা যদি ঠিক না হয়, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? তিনি বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

প্রিয়াঙ্কা ও রুবাইয়ার মাথায় আঘাত লাগলেও চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তবে তাদের পরিবার বলেছে, পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তারা চিন্তামুক্ত হতে পারছে না। মঙ্গলবার সিএমএইচ থেকে ছাড়া পাওয়া সোহেল রানা ডান হাতের দুই আঙুলে আঘাত পেয়েছে। তার বাবা দুলাল গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে বাসা থেকে বের হলো সুস্থ অবস্থায়, ফিরল আহত হয়ে। আমার ছেলে কলেজে পড়তে গিয়ে যদি মরে যায়, তাহলে এই শিক্ষা দিয়ে আমি কী করব?’