Thank you for trying Sticky AMP!!

চীনের আপত্তি, পেছাল ইউনেসকো

চীনের নেতৃত্বে তিনটি দেশের দাবির মুখে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সুন্দরবনের কাছে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাপারে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপালে একটি এবং চীনের বিনিয়োগে পটুয়াখালীর পায়রা ও বরগুনার তালতলীতে দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় এই আপত্তি তুলে নেওয়া হয়। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এই সভা শুরু হয়েছে গত ৩০ জুন, শেষ হবে ১০ জুলাই।

সভায় বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সুন্দরবনের পাশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়া বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান ধরে রাখার নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও সুন্দরবনের পাশে ১৫৪টি বড় শিল্পকারখানা করার অনুমতি দিয়েছে। এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করার সুপারিশ করেছিল বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র। সুপারিশ না মানলে এ বছরের সভায় সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছিল। ২ জুলাই এসব সুপারিশের ব্যাপারে লিখিত আপত্তি দেয় সদস্যদেশ চীন, কিউবা ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনা।

আপত্তি জানিয়ে এই প্রস্তাব ৪ জুলাই কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। তখন আজারবাইজান, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, তিউনিসিয়া, তানজানিয়া, বুর্কিনা ফাসো, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে এবং পর্যবেক্ষক হিসেবে ভারতসহ ১৫টি রাষ্ট্র এই আপত্তির প্রতি সমর্থন জানায়। এরপর ঐতিহ্য কমিটির সভাপতি সুপারিশগুলো প্রত্যাহার করে নেন।

তবে ১৫৪টি শিল্পকারখানার ব্যাপারে আপত্তি টেকেনি। ফলে এসবের ক্ষেত্রে ঐতিহ্য কমিটির সুপারিশ বলবৎ থাকছে। এসব প্রকল্পের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে কমিটি এর প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর একটি কৌশলগত প্রভাব সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউনেসকোর একটি প্রতিনিধিদল এ জন্য এ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে আসতে চেয়েছে।

জানতে চাইলে বাকুতে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় অংশ নেওয়া সরকারের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে বিশ্লেষণগত পার্থক্য থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানাব।’

তিনটি প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি প্রত্যাহার প্রশ্নে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংস্থা ক্লাইমেট হোম নিউজ একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, মূলত চীনের চাপে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সুন্দরবনের পাশের ওই তিন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাপারে তাদের সরাসরি আপত্তি তুলে নিয়েছে। কারণ, তিনটি প্রকল্পের দুটিতে চীন ও একটিতে ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে।

>বাংলাদেশ তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও সুন্দরবনের পাশে ১৫৪টি বড় শিল্পকারখানা করার অনুমতি দিয়েছে।

পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা থ্রি ফিফটি ডিগ্রি থেকে সুন্দরবন সুরক্ষায় ইউনেসকোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চীন বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সাত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। পায়রা ও তালতলীর বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি তাদের বিনিয়োগে নির্মিত হচ্ছে।
আর তারাই ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাপারে ইউনেসকোর আপত্তি তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপ দিয়ে তা প্রত্যাহারে ভূমিকা রেখেছে। এতে বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ সামগ্রিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে ও কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।