Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না ২২ বছর

উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্র সংসদের (আকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালে। ভিপি-জিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদে নিরঙ্কুশ জয় পায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল। তবে পরবর্তী সময়ে নানা কারণে সমালোচিত হয় এই ছাত্র সংসদ।

সনদ জালিয়াতি করে কলেজে ভর্তির বিষয়টি তদন্তে ধরা পড়ার পর ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) রাশেদুজ্জামান ওরফে মাসুমের ছাত্রত্বই বাতিল করে প্রশাসন। কলেজের বার্ষিক স্মরণিকায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের ছবি ছাপিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ম্যাগাজিন সম্পাদক। এই অবস্থায় ১৯৯৮ সালে তফসিল ঘোষণার পর স্থগিত করা নির্বাচন ২২ বছরেও আর হয়নি। ৮০ বছরের পুরোনো এই কলেজ ছাত্র সংসদ অচল থাকায় আকসু ভবনের প্রাণ নেই। আকসু ভবনটি এখন ছাত্রলীগের দখলে।

সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় আকসু নির্বাচনের দাবিতেও সোচ্চার ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। আকসু নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। ছাত্র ইউনিয়ন পোস্টার সেঁটেছে।

কলেজ ছাত্র সংসদ সচল রাখার পক্ষে সাবেক ছাত্রনেতারাও। তাঁরা বলছেন, পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা ছাড়াও খেলাধুলা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সংস্কৃতিচর্চা, নিয়মিত সাময়িকী প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল জ্ঞানের চর্চা, তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ, শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবি আদায়, ক্যাম্পাসে বহিরাগত ঠেকানো, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্ব নিতে মেধাবী, ত্যাগী ও যোগ্যদের তৈরি করতে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভোটাধিকার হারাচ্ছেন, দেশ হারাচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব।

কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য স্যার আজিজুল হকের নামে স্থাপিত সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্র সংসদ স্বাধীনতার পূর্ব-পরবর্তী সময়ে বগুড়ার স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির বাতিঘর ছিল।

সর্বশেষ ছাত্র সংসদের এজিএস আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভিপি রাশেদুজ্জামান মাসুম ভুয়া নম্বরপত্রের মাধ্যমে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি কেলেঙ্কারি এবং কলেজের বার্ষিক স্মরণিকায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ছাপানোয় বিব্রত কলেজ প্রশাসন পরবর্তী নির্বাচন স্থগিত করে।

১৯৯৪ সালে নির্বাচিত আকসুর সাবেক ভিপি সুইন চৌধুরী বলেন, আকসুর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক বিকাশমান গণতান্ত্রিক চর্চা, মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, একে অন্যের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শিক্ষা কার্যক্রমে মুক্ত আলোচনার জায়গাটিও ধ্বংস হয়েছে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক সুস্থ ধারার রাজনীতি চরম নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হলে শিগগিরই আকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হবে।

আকসুর সাবেক জিএস ও বর্তমানে বগুড়া জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, অতীতে আকসুর মাধ্যমেই বগুড়ার রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আকসুর সাবেক নেতারা স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধেও তাঁরা সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। আকসুর কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় স্থানীয় রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে বগুড়ার পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম বলেন, গণতন্ত্রচর্চা এবং যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির পাঠশালা হলো ছাত্র সংসদ। শুধু মেধাবী হলেই যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হয় না। নেতৃত্ব তৈরির হাতে-কলমে শিক্ষাটা হয় ছাত্র সংসদের কর্মকাণ্ডে। ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে সুনেতৃত্ব অর্জনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছাত্ররাই। ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ রেখে ছাত্ররাজনীতি চর্চার পথ বন্ধ রাখলে জাতীয় রাজনীতিও মেধাশূন্য হবে। রাজনীতিতে মেধা ও যোগ্য নেতৃত্বের আলোয় আলোকিত করতে হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন খুবই জরুরি।

কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ বলেন, আকসু ভবন দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ ছিল। সেটি পরিষ্কার করে বর্তমানে ছাত্রলীগ ব্যবহার করছে।

সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং বর্তমানে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আকসুর ছাত্র সংসদ বন্ধ থাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কলেজের তিনটি আবাসিক হল এক যুগ ধরে বন্ধ। ছাত্র সংসদ বন্ধ থাকলেও ফি ওঠানো হচ্ছে। ছাত্র সংসদ সচল থাকলে এসব নিয়ে কথা বলা যেত।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলী বলেন, কলেজ প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নেবে না। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসতে হবে। তবে কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি।