Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাদে বাগান ভেতরে সুন্দর বিনোদন, চলছে অটোরিকশা

কী নেই! নখ কাটার যন্ত্র থেকে শুরু করে খাওয়ার পানি। কচ্ছপের গতিতে চলা গাড়িবহরের যানজটে বসে পা তুলে অনায়াসেই পত্রিকা পড়া যাবে। ঝিমুনি তো পাবেই। তাই গা এলিয়ে দেওয়ার জন্য দুটি কুশনও আছে। অন্তত ২০ ধরনের টুকিটাকি জিনিস নিয়ে রাজধানী ঢাকায় ছুটে চলছে সিএনজিচালিত সবুজ রঙের একটি অটোরিকশা।

অলংকারশিল্পী তপন চন্দ্র ভৌমিক এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। চোখে সমস্যা হওয়ায় অলংকারের কাজ ছেড়ে প্রায় আট বছর ধরে চালকের পেশায় আছেন। তবে শিল্পী মন তাঁকে ছেড়ে যায়নি। দিনে দিনে প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে নিজের চালানো অটোরিকশাটিকে অলংকৃত করেছেন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক তপন চন্দ্র ভৌমিক শখের বশে নিজের চালানো অটোরিকশাটি মনের মতো সাজিয়েছেন। ছবি: সুহাদা আফরিন

তপন চন্দ্র জানান, অটোরিকশাটিকে মনের মতো করে সাজাতে তাঁর প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গাঁটের পয়সা দিয়েই করেছেন। কিন্তু কেন? তিনি বলেন, ‘শখের বশেই করছি। যাত্রীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য।’ হঠাৎ কিছু লেখার প্রয়োজন হলে নোটবুক-কলম পাওয়া যাবে। টিস্যু, ছাতা, বমি-মাথাব্যথার ওষুধ, ডাস্টবিন, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, আয়না-চিরুনি থেকে শুরু করে পিঠ চুলকানির কাঠিও আছে। তিনটি পত্রিকা রাখেন। বিনোদনের জন্য ছোট একটি এলইডি মনিটর আছে। মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে সেখানে সিনেমা-নাটক-গান সবই চলে। জানালেন, খুব শিগগির ওয়াই-ফাই সুবিধা চালু করবেন।

আধুনিক এই অটোরিকশা নিয়ে যাত্রীদের কৌতূহলও ব্যাপক। তপন বলেন, অনেকেই মনে করেন, এত কিছু থাকায় ভাড়া বেশি হবে। কিন্তু এসবের জন্য কারও কাছ থেকে বাড়তি কোনো পয়সা নেন না বলে জানালেন; বরং খুশি হয়ে বকশিশ দেন যাত্রীরা। মিটার বা ভাড়ায়—যাত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ীই চলেন। তবে সম্প্রতি তিনি ‘ও-ভাই’ নামের একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপে যুক্ত হয়েছেন।

কী নেই এই অটোরিকশায়! যাত্রাপথে দরকারি প্রায় সবই পাওয়া যাবে। ছবি: সুহাদা আফরিন


এ অটোরিকশা দূর থেকে দেখলে মনে হবে চলন্ত ছাদ-বাগান ছুটে চলছে। চারদিকে কৃত্রিম ঘাস। তার মাঝে টাইম ফুল, পাতাবাহারসহ কয়েক প্রজাতির গাছ। তপনের দাবি, ৪৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস এলেও এই গাছের কিছু হবে না। প্রতিদিন নিজ হাতেই এসবের যত্ন নেন। গাছের প্রতি মানুষের অবহেলা দেখেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার ছাদে গাছ লাগিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানুষ তপন পরিবার নিয়ে থাকেন খিলগাঁওয়ের গোড়ানে। এক ছেলে ও দুই মেয়ের এই জনকের পরিবার তাঁকে খেয়ালি মনে করে। তপন বলেন, ‘ছেলে এমবিএতে পড়ে, আবার চাকরিও করে। সে-ই সংসার চালায়। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, আরেক মেয়ে কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা দিল।’ অটোরিকশা নিয়ে তাঁর এই কাজ দেখে লোকজন হাসে, ভিড় করে, ছবি তোলে—এসব পরিবারের পছন্দ নয়। কিন্তু তিনি মনের খুশিতেই করেন।

তপন সিএনজিচালিত এই অটোরিকশার মালিক নন। দিন শেষে আয় থেকে ৯০০ টাকা মালিককে দিতে হয়। বাকি যা থাকে, তা এই অটোরিকশার পেছনে খরচ করেন। সাজানোয় মালিক তাঁকে কিছু বলেনি। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি চালান।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, যাত্রাপথে যদি কেউ অসহায় হয়ে পড়েন, তিনি সাহায্য করবেন। এ ছাড়া গরিব রোগীদের তিনি বিনা মূল্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তপন বলেন, ‘আমি রাজা হতে চাই না। রাজা হওয়ার সাধ নেই। মানুষের উপকারে লাগলেই শান্তি।’