Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেলের ছবির পানে চেয়ে আজও অশ্রু ঝরে মায়ের

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের ছবি হাতে মা অপর্ণা চ্যাটার্জি। পাশে বাবা তারাপদ চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি পিরোজপুর সদর উপজেলার চলিশা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুর সদর উপজেলার চলিশা গ্রামের কৃষক তারাপদ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঢুকেই বসার ঘরে (ড্রয়িং রুম) চোখে পড়ে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের তিনটি ছবি। মা অপর্ণা চ্যাটার্জির শয়নকক্ষও সাজানো নীলাদ্রির ছবি দিয়ে। বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের কক্ষের দেয়ালজুড়েও আছে নীলাদ্রির ছবি। পাঁচ বছর ধরে বাড়িজুড়ে থাকা ছেলের এসব ছবির দিকে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু ঝরে মায়ের চোখে। নীলাদ্রি যে এখন কেবলই ছবি।

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে (২৬) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পরে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিল জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এ ঘটনায় নীলাদ্রির স্ত্রী আশা মণি অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল না করায় নীলাদ্রি হত্যাকাণ্ডের বিচার পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

নীলাদ্রি পিরোজপুর সদর উপজেলার চলিশা গ্রামের কৃষক তারাপদ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে। তিনি বেসরকারি একটি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করার পাশাপাশি ব্লগে নিয়মিত লিখতেন এবং গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

মামলার তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার কারণে হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন মা অপর্ণা চ্যাটার্জি। অপর্ণা চ্যাটার্জি বলেন, ‘নীলাদ্রির হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর হয়ে গেল। এত দিনেও হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। এত দিনেও বিচার শুরু না হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তারাপদ চট্টোপাধ্যায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় বড়। তাঁর ডাক নাম নান্টু। চলিশা গ্রামের সবাই তাঁকে নান্টু নামেই চেনে। নীলাদ্রি চ্যাটার্জির শিক্ষাজীবন শুরু চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তেজদাসকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি ও পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৩ সালে প্রথম বিভাগে এমএ পাস করেন। এরপর একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নেন। পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

নীলাদ্রির মা অপর্ণা চ্যাটার্জি জানালেন, মৃত্যুর এক মাস আগে নীলাদ্রি বাড়িতে এসেছিল। ১৮ দিন বাড়িতে থেকে ২৫ জুলাই ঢাকায় চলে যায়। এর ১৪ দিন পর ৭ আগস্ট মারা যায়। বাড়িতে আসার পর তিনি নিজে ছেলেকে নিয়ে পিরোজপুর শহরে গিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য অনলাইনে ফরম পূরণ করিয়েছেন। ঢাকা যাওয়ার সময় মা অপর্ণা চ্যাটার্জি ছেলেকে বলেছিলেন আর কটা দিন বাড়িতে থেকে যেতে। বাড়িতে নীলাদ্রি চুপচাপ ছিল। এর আগে বাড়িতে এলে নীলাদ্রির বোন ও চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে থাকত। কিন্তু ওই বার নীলাদ্রি মন খারাপ করে বসে থাকত।

নীলাদ্রির বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দাদা আর আমি পিঠাপিঠি ভাইবোন। যখন দাদা বাড়িতে ছিল তখন সব সময় একসঙ্গে সময় কাটাতাম। দাদা ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে আমরা একসঙ্গে থাকতাম। ও সব সময় আমাকে পড়িয়ে দিত। বড় ভাইয়ের পাশাপাশি ও আমার একজন শিক্ষকও ছিল।’

নীলাদ্রির চাচা নির্মল কুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি নীলাদ্রির শিক্ষক ছিলেন। এইচএসসি পর্যন্ত তাকে পড়িয়েছেন। নীলাদ্রি ঢাকার কিছুই চিনত না। ২০০৭ সালে ওকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তিনিই প্রথম ঢাকায় নিয়ে যান। আবার একইভাবে ঢাকায় গিয়ে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। নির্মল কুমার বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি আমার ভাইয়ের ছেলের হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দ্রুত আদালতে দাখিল করে বিচারের সুব্যবস্থা করার।’