Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেলের জন্মদিনটাও যখন মায়ের জন্য কষ্টের

আবরার ফাহাদ। ফাইল ছবি

বেঁচে থাকলে আজ ২২ বছর পূর্ণ হতো ছেলেটার, মা সকালবেলা ফোন করে বলতেন, ‘আব্বু বাইরে গিয়ে ভালো কিছু খেয়ে নিয়ো।’ অথচ তাঁর জন্য আজকের দিনটি ছেলের মৃত্যু দিনের মতোই বেদনার বলে জানালের স্কুলশিক্ষক রোকেয়া খাতুন।

রোকেয়ার বড় ছেলে আবরার ফাহাদ যখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, তখন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারটিতে নতুন আশা জেগেছিল। কিন্তু গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে শেষ হয়ে গেছে সব আশা–আকাঙ্ক্ষা। ওই রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। সারা দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল এ ঘটনা।

গতকাল মঙ্গলবার আবরারদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে। বাড়ির একটা ঘরে বসে কথা হচ্ছিল। তাঁরা জানালেন, আবরার বাড়ি এলে এ ঘরেই থাকতেন।

রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি আমার আব্বুর জন্মদিন। ১৯৯৮ সালে যেদিন ওর জন্ম হলো, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। বাংলা সনে মাঘ মাস। এক সপ্তাহ ধরে শীতের কুয়াশায় মোড়ানো ছিল চারপাশ। আর আবরার যেদিন জন্ম নেয়, সেদিন সূর্যটা শহরে আলো ছড়িয়েছিল।’

নিজের জন্মের সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছিলেন রোকেয়া খাতুন। তাই ছেলের জন্মের পর থেকে আবরারকেই আব্বু বলে ডাকতেন। আবরার ফাহাদ নামটা স্বামী বরকত উল্লাহর দেওয়া। জন্মের পর মাত্র একবার ঘটা করে বাড়িতে আবরারের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। পাঁচ বছর বয়সে যে বছর আবরারকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, সেই বছর। এখনো মা যত্ন করে রেখেছেন পুরোনো ছবির অ্যালবাম।

>

জন্মদিনের সকালে ছেলেকে ফোন করে ভালো কিছু খেয়ে নিতে বলতেন রোকেয়া খাতুন। এবার কাউকে কিছু বলার নেই।

এসব কথা বলতে বলতেই অ্যালবামের পাতা উল্টে ছবিগুলো দেখাচ্ছিলেন রোকেয়া খাতুন। গলা ধরে আসে, গাল বেয়ে ঝরতে থাকে অশ্রু। পাশেই বসে ছিলেন ছোট ছেলে আবরার ফাইয়াজ।

শেষ চার বছর ঢাকাতে থাকতেন আবরার। পড়াশোনার জন্য জন্মদিনগুলোও ঢাকাতেই কাটাতে হতো। সেসব দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠেই রোকেয়া খাতুন ছেলেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন। ভালোমন্দ খেতে বলতেন। আর এবারে ছেলের জন্মদিনে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না, কেবল কষ্টই বাড়ছে। কান্না চাপছেন। তিনি বলেন, এই দুটো দিন (আবরারের জন্ম ও মৃত্যুর দিন) তাঁর জন্য এখন কেবলই কান্নার। এ ছাড়া কিচ্ছু করার নেই। কাউকে বলার নেই, ‘আব্বু বাইরে গিয়ে ভালো কিছু কিনে খেয়ে নিয়ো।’

সম্প্রতি ফোন করে এক ব্যক্তি ফাহাদ হত্যা মামলার আসামিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন অভিযোগ করে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘ছেলের হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করার প্রশ্নই ওঠে না।’

ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ভাইয়ের জন্মদিনে ঘটা করে অনুষ্ঠান হতো না, কিন্তু সেটা পরিবারের জন্য একটা আনন্দের দিন ছিল। এখন দিনটি কেবলই কষ্টের।

মুঠোফোনে কথা হয় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু লোক নানা গুজব ছড়াচ্ছেন। এসব উপেক্ষা করে তাঁরা আছেন ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায়।