Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে ভরণপোষণ পেলেন দম্পতি

মোয়াজ্জেম হোসেন খান ও মমতাজ বেগমের সঙ্গে ছেলে তাসলিম খান। জেলা আইনগত সহায়তা কার্যালয়, শেরপুর, ২৬ আগস্ট। ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরে তাসলিম খান (৪৩) নামে এক ‘ধনাঢ্য’ ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে ভরণপোষণের ব্যবস্থা হয়েছে এক অসহায় দম্পতির। জেলা আইনগত সহায়তা কার্যালয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রমের আওতায় গতকাল সোমবার ওই ব্যবস্থা হয়।

অসহায় এই দুই ব্যক্তি হচ্ছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণ খোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন খান (৬৬) এবং তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগম (৬০)। আর তাসলিম হচ্ছেন তাঁদের জ্যেষ্ঠ ছেলে।

জেলা আইনগত সহায়তা কর্মকর্তা (জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ) জুলফিকার হোসাইন রনির সভাপতিত্বে বাদীপক্ষে লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী শাহ মো. শাহীন হাসান খান ও আসামিপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আধারের উপস্থিতিতে তাসলিম খান তাঁর বাবা-মাকে ভরণপোষণ বাবদ প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকাসহ প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাসলিমের এই প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির সমাধান হয়। পরে শেরপুরের আমলি আদালত থেকে মা-বাবার ভরণপোষণের মামলায় পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান ছেলে তাসলিম খান।

জেলা আইনগত সহায়তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মোয়াজ্জেম হোসেন খান ও মমতাজ বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাঁরা স্বামীর বাড়িতে আর ছেলেরা ঢাকায় থাকেন। তাঁদের মধ্যে বড় ছেলে তাসলিম খান ঠিকাদারি ব্যবসা করেন ও আর্থিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ছোট ছেলে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মোয়াজ্জেম হোসেনের বসতবাড়ি ছাড়া সহায়সম্পদ খুব একটা নেই। ফলে অভাব-অনটন আর কষ্টের মধ্য দিয়ে ওই দম্পতির সংসার চলছিল। তার ওপর প্রায় এক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন মোয়াজ্জেম। ফলে প্রতি মাসে প্রায় চার হাজার টাকার চিকিৎসা খরচসহ সংসার চালানো তাঁর পক্ষে একেবারেই কঠিন হয়ে পড়ে। ছোট ছেলে বাবা-মায়ের খরচের জন্য মাঝেমধ্যে সামান্য কিছু দিলেও অবস্থাপন্ন বড় ছেলে বেশ কিছুদিন ধরে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

মোয়াজ্জেম দম্পতি প্রায় তিন মাস আগে শেরপুরের জজ আদালত ভবনে অবস্থিত জেলা আইনগত সহায়তা কার্যালয়ে বিষয়টি জানান। এতে সাড়া দিয়ে জেলা আইনগত সহায়তা কর্মকর্তা জুলফিকার হোসাইন রনি উভয় পক্ষকে নিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যক্রম শুরু করেন। তবে বারবার অবগত করার পরও বড় ছেলে তাসলিম খান সাড়া দিচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় আইনগত সহায়তা কার্যালয়ের পরামর্শে গত ৩১ জুলাই মমতাজ বেগম বাদী হয়ে স্বামী ও তাঁর ভরণপোষণের দাবিতে ছেলে তাসলিম খানকে আসামি করে শেরপুরের আমলি আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। ওই মামলা আমলে নিয়ে আদালত তাসলিম খানকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর গতকাল তাসলিম খান জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নাহিদ সুলতানার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আইনগত সহায়তা কার্যালয়ে বসে বিষয়টির আপস-মীমাংসার সুযোগ দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছেলে তাসলিম খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলায় বাবা-মা তাঁর তেমন যত্ন নেননি। এ জন্য তাঁর মনে দুঃখ ও কষ্ট আছে। এ ছাড়া পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ছিল। যে কারণে কিছুদিন তিনি তাঁদের ভরণপোষণ করেননি। আইনগত সহায়তা কার্যালয়ের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয়েছে। তাসলিমের ভাষ্য, মা-বাবাও তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছেন।

জেলা আইনগত সহায়তা কর্মকর্তা জুলফিকার হোসাইন রনি প্রথম আলোকে বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের ফলে সৃষ্ট মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাঁর কার্যালয় বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। এর অংশ হিসেবে মোয়াজ্জেম-মমতাজ দম্পতির সঙ্গে ছেলে তাসলিম খানের বিরোধটিও নিষ্পত্তিতে তাঁর কার্যালয় উদ্যোগ নিয়েছিল। এখন সমস্যার সমাধান হয়েছে।