Thank you for trying Sticky AMP!!

ছোট্ট মেয়েদের বড় সাফল্য

জেএসসিতে প্রত্যাশিত ফল জিপিএ-৫ পেয়ে দুই বান্ধবীর উল্লাস। গতকাল রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রথম আলো

নতুন বছরের ঠিক আগের দিন বড় ধরনের সাফল্যের খবর দিল দেশের ছোট্ট মেয়েরা। ছোটদের বড় পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ফলাফলের মূল দুই সূচক পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোতেই ছেলেদের চেয়ে ভালো করেছে মেয়েরা।

এই দুই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে প্রায় ৪৩ লাখ ছেলেমেয়ে আজ ১ জানুয়ারি থেকে তাদের শিক্ষা জীবনের নতুন একটি স্তরে পা রাখছে। এদের একটি অংশ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিকে পা রাখবে, আরেকটি অংশ অষ্টম শ্রেণি শেষ করে নবম শ্রেণিতে যাবে। যেখান থেকে একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পড়াশোনা করবে, সেটা ঠিক হবে।

নতুন শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহসহ দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি পরীক্ষায় এবার গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই গেলবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। আর ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ও বেড়েছে। গতবারের চেয়ে ১০ হাজার ৬৩৯ বেড়ে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৬ হাজার ৭৪৭ জন।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেএসসিতে মেয়েদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর ছেলেদের পাসের হার ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়েও এগিয়ে মেয়েরা। মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৪ হাজার ৯১৮ জন ছাত্রী। আর ছাত্র ৩১ হাজার ৮২৯ জন। এই তথ্য বলছে, জিপিএ-৫ পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৯ বেশি। সার্বিক ফলও গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ গতবারের চেয়ে বেড়েছে।শুধু জেএসসি পরীক্ষাই নয়, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতেও এগিয়ে মেয়েরা। এই পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রী ৯৫ দশমিক ৬১ শতাংশ আর ছাত্র ৯৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যেও ছাত্রী বেশি ছিল।

প্রাথমিক সমাপনীতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৮ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৭ এবং ছাত্র ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৫১। অর্থাৎ ছাত্রদের চেয়ে ছাত্র ৪৩ হাজার ১৮৬ জন বেশি। অবশ্য সার্বিক ফলে গতবারের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।

>

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ দুটোতেই মেয়েরা এগিয়ে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে এই দুই পরীক্ষার ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এর আগে সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেওয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী আরও কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সমতা অর্জন করেছে। বরং দুই স্তরেই ছাত্রী বেশি। এখন ফলাফলেও মেয়েরা এগিয়ে চলছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী পাস করা শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ধারাবাহিক উন্নয়নের ফল এটি। অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। মেয়েদের এই সফলতা নিশ্চয়ই আনন্দের। কিন্তু একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, মেয়েরা যত ওপরের স্তরে ওঠে, ঝরে পড়ার হারও তত বাড়ে। তখন দেখা যায়, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা বেশি ঝরে পড়ে। এই বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রাথমিকে ধাক্কা দুই কারণে

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২০১৭ সালের তুলনায় গত বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বেড়ে ছিল। কিন্তু এ বছর উল্টো হয়েছে। এবার পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ এবার গতবারের চেয়ে ৪২ হাজার ১০৫ জন কমেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত দুটি কারণে এবার ফল গতবারের চেয়ে খারাপ হয়েছে। আগে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হতো একই উপজেলার শিক্ষকদের দিয়ে। ফলে একধরনের নমনীয়তা ছিল। এবার এক উপজেলার উত্তরপত্র অন্য উপজেলার শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর একটি প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। এ ছাড়া বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) বাদ দেওয়ার প্রভাবও আছে এবার।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবার ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে গাজীপুর (পাসের হার ৯৯.১৪%)। আর ৫১০টি উপজেলা ও থানার মধ্যে প্রথম হয়েছে ভোলার দৌলতখান। এই উপজেলার শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। আর বিভাগগুলোর মধ্যে শীর্ষে বরিশাল।

অন্যদিকে ফলাফলে ফরিদপুর জেলা সবচেয়ে পিছিয়ে (৮৫.৯৬%)। আর উপজেলাগুলোর মধ্যে পিছিয়ে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় পাসের হার ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যেখানে সারা দেশের গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বিদ্যালয়ের ধরন অনুযায়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে থাকা প্রাথমিক স্তরের শিশুরা সবচেয়ে ভালো করেছে। এ ধরনের বিদ্যালয়গুলোতে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গড় পাসের হার ৯৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিল ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৫১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৩ জন।

জেএসসিতে ভালো ফলের বড় কারণ গণিত ও ইংরেজি

বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার বেশির ভাগ বোর্ডেই কঠিন বিষয় হিসেবে পরিচিত গণিত ও ইংরেজির ফল গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিক ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে এ দুটি বিষয় বড় কাজ করেছে।

এবার পাসের হারে এগিয়ে বরিশাল বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। পিছিয়ে ঢাকা বোর্ড, পাসের হার ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

অবশ্য জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে ঢাকা বোর্ড এগিয়ে। এই বোর্ডের অধীন ১৮ হাজার ৯৫৩ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

পাঁচ বছরের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর ও এবারই জিপিএ-৫ কম। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেত। একাধিক শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, দুই বছর ধরে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ হচ্ছে না। মূলত এ কারণেই জিপিএ-৫ কম হচ্ছে।

গতকাল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, জিপিএ-৫ মাথা থেকে বের করে দেওয়া উচিত। আগামী বছরের জেএসসি পরীক্ষা থেকে জিপিএ-৫-এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ সূচক ৪ করার পরিকল্পনার কথাও জানান মন্ত্রী।

নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ২২ লাখ ২১ হাজার ৫৯১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৮ জন।