Thank you for trying Sticky AMP!!

জমিদারবাড়িতে লেখাপড়া

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে এই জমিদারবাড়িতে চলছে মুড়াপাড়া কলেজের কার্যক্রম l প্রথম আলো

শত বছরের বেশি পুরোনো জমিদারবাড়ি। প্রকাণ্ড বাড়ির সামনে-পেছনে বিশাল মাঠ। আছে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট। শতবর্ষী গাছের সারি। আভিজাত্যের ছাপ বাড়ির নকশা আর কারুকাজে। এমন এক জমিদারবাড়িতেই কার্যক্রম চলছে মুড়াপাড়া কলেজের।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫২ বিঘা জমির ওপর এই জমিদারবাড়ি। কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮৮৯ সালে জমিদার রামরতন ব্যানার্জী এই বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর বড় ছেলে বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী এর পরিধি আরও বাড়ান। ১৯০৯ সালে বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর ছোট ভাই জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী জমিদারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে জমিদার সপরিবার কলকাতা চলে যান। পরে সরকার এটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন সরকার এখানে এবি হাসপাতাল স্থাপন করে। এরপর এটিকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ১৯৬৬ সালে জমিদার বাড়ির এক পাশে মুড়াপাড়া পাইলট হাইস্কুল এবং স্কুলের দোতলা ভবনে হাজী গোল বকস ভূঁইয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিহারি ক্যাম্প, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র ও হাসপাতাল অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নামকরণ করা হয় মুড়াপাড়া কলেজ। পাশাপাশি কলেজটিকে জমিদারবাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও কলা বিভাগ চালু হয়। ডিগ্রি পর্যায়ে ছিল কলা ও বাণিজ্য বিভাগ।

বর্তমানে মুড়াপাড়া কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও কলা বিভাগ, ডিগ্রি পর্যায়ে বিএসসি, বিএ, বিএসএস, বিবিএস; অনার্স পর্যায়ে হিসাববিজ্ঞান, মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও মাস্টার্স পর্যায়ে অ্যাকাউন্টিং কোর্স চালু আছে।

কলেজে ক্লাস চলে সকাল ৯টা ২০ থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। গত মাসে স্থানীয় সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজীর নামে একটি অডিটরিয়াম করা হয়েছে। শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। রয়েছে দুটি খেলার মাঠ। ইনডোর গেমস ক্যারম, দাবা ও টেবিল টেনিসের ব্যবস্থা আছে। তবে ছাত্র সংসদ ছাড়া কলেজে কোনো ক্লাব নেই। কোনো ক্যানটিন নেই। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

কলেজের প্রধান সহকারী মো. মজিবর রহমান মিঞা বলেন, কলেজে শিক্ষার্থীদের ৮০ ভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। কারও উপস্থিতি কম থাকলে ডেকে বোঝানো হয়।

 উচ্চমাধ্যমিক বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান ইসলাম বলেন, এটা রূপগঞ্জের সেরা কলেজ। অন্য কোথাও এই কলেজের মতো এত সুযোগ-সুবিধা নেই। শিক্ষকেরা ভালোভাবে বোঝান।

খাদিজা আখতার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকেরা ভালো দিকনির্দেশনা দেন। ক্যাম্পাসে ঘুরতে ভালো লাগে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আমাদের ক্যাম্পাস দেখতে আসেন।’

কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি শাহরিয়ার পান্না সোহেল বলেন, এই কলেজ সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কলেজের শিক্ষার্থীরাই এসবে অংশ নেন। বার্ষিক বনভোজন ও খেলাধুলা তো আছেই।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, এটা নারায়ণগঞ্জের অন্যতম পুরোনো কলেজ। শীতলক্ষ্যার তীরে সুবিশাল ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের নান্দনিকতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হয়। শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে এখানে জ্ঞান আহরণের জন্য আসে।