Thank you for trying Sticky AMP!!

জলের ফুল শ্যামাকোলা

শ্যামাকোলা ষ ছবি: লেখক

গাছটি গড়নের দিক থেকে খানিকটা আজব বটে! গভীর জলাশয়েও শুধু ফুলটি পানির ওপর দিব্যি ভেসে থাকতে পারে। আবার কখনো কখনো অর্ধনিমজ্জিত পাতাগুলো জড়াজড়ি করে নৌকার মতো ভাসতে থাকে। তবে ফুলটি সরু নলের মাধ্যমে গাছের গোড়ার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ছেলেবেলায় আমাদের বাড়ির সামনে বর্ষা মৌসুমে জলটইটম্বুর খালে অসংখ্যবার দেখেছি। তখন অনেকবার ভেবেছি, শুকনো মৌসুমে গাছগুলো কোথায় থাকে। প্রতি বর্ষায় আবার পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিব্যি বেড়ে ওঠে। আসলে এসব গাছের অতি সূক্ষ্ম বীজগুলোর প্রাণশক্তি অফুরান। অনুকূল পরিবেশে বংশবৃদ্ধির জন্য এরা বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে পারে। গাছটির নাম শ্যামাকোলা।
আমাদের বাড়ির সামনের সেই খালটি এখন মৃতপ্রায়। অসচেতন মানুষ বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে খালটি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত। ফলে সেখানে এখন আর পানিকোলা দেখা যায় না। পরে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে বেশ কয়েকবার দেখেছি। আইইউসিএন প্রকাশিত বায়োডাইভারসিটি অব টাঙ্গুয়ার হাওর গ্রন্থেও এ ফুলের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সম্প্রতি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নে একটি দুর্লভ শাপলার নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে ফুলটি আবার চোখে পড়ে। অনেকের কাছেই ফুলটি হয়তো নিতান্তই জলজ আগাছা। কিন্তু প্রাণবৈচিত্র্য সৃষ্টিতে এদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। দেশের অগভীর জলাশয়, খাল-বিল, ডোবা-নালা বা বদ্ধ পানিতে এ গাছ দেখা যায়। তবে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক বিস্তৃতি অনেকটাই কমেছে।
এরা রাম করোলা, কাক্কোলাই (Ottelia alismoides. Syn Stratiotes alismoides) বা পানিকোলা নামেও পরিচিত। তবে এই নামগুলোর সঙ্গে গাছের কোনো সাদৃশ্য আছে কি না, বলা মুশকিল। ইংরেজি নাম ওয়াটার প্লানটেইন, ডাকলেটুস ইত্যাদি। এরা পানিতে নিমজ্জিত বীরুৎজাতীয় গাছ, মাটিতে মূলীবদ্ধ থাকে। পাতা ভাসমান, স্বচ্ছ, চারপাশ খাড়া, গড়নের দিক থেকে প্রশস্ত ডিম্বাকার বা তাম্বুলাকৃতির, সাধারণত ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। উপবৃত্তাকার এই পাতাগুলোর শিরা ৭ থেকে ১১টি, অভিসারী, মূলীয় অংশ ক্রমশ একত্রিত হয়ে একটি বৃন্ত গঠন করে। বৃত্যংশ তিনটি। পাপড়ির সংখ্যা তিন, সাদা। নিম্নাংশ হলুদ দাগযুক্ত, দ্বিখণ্ডিত পুংকেশর ৬ থেকে ১৫টি। ফল ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ ও শীর্ষ সরু। বীজ অনেক, দীর্ঘায়ত ও পুরু। প্রস্ফুটন মৌসুম প্রায় বর্ষব্যপ্ত।
পানিকোলা আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। গাছের বৃন্ত ও ফলক সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শিশুরা বীজ শুকিয়ে ভেজে খেতে পছন্দ করে।