Thank you for trying Sticky AMP!!

জাপান–ভারতের অবস্থানের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে বাংলাদেশকে

ইমতিয়াজ আহমেদ

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। এটা কোনো নাটকের অংশ কি না, এটাও ভাবার বিষয়। আর এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টিও সন্দেহজনক।

অং সান সু চির অবস্থান এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি পরিষ্কার না, সেহেতু কোনো সিদ্ধান্ত আসার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত। আমাদের অবশ্যই ভাবনা আছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে। এখন দেখার বিষয়, সেনা অভ্যুত্থানের পর পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কি না। আর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তাদের শর্তের মধ্যে রাখবে কি না, সেটাও দেখা দরকার। এর চেয়েও গুরত্ব দেওয়ার বিষয়, ভারত ও জাপান এখন কী অবস্থান নেয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। আমরা দেখেছি যে যুক্তরাষ্ট্রও মিয়ানমারের বিষয়ে একটি কড়া অবস্থা নিয়ে আছে। খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পও শক্ত কথা বলেছেন। কিন্তু এখন এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দুই বড় শক্তি ভারত ও জাপানের অবস্থানটা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

এই অভ্যুত্থানের পরও মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিপক্ষে চীন যাবে বলে মনে হয় না। তবে ভারত ও জাপান সক্রিয় হলে চীনের ওপর একটি চাপ তৈরি সম্ভব। পশ্চিমা বিশ্ব এবং বড় প্রতিবেশী ভারত এককাট্টা হলে এটা বলার জায়গা সৃষ্টি হবে যে একা চীন মিয়ানমারকে সহায়তা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কিন্তু বারবার বলে আসছে, মিয়ানমারে কার্যত কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নেই। বাংলাদেশ তাদের ওপর চাপ প্রয়োগের কথাই বলে এসেছে। কারণ, সেনাবাহিনীই সেখানে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। এখন তা প্রমাণিত হলো। এখন কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ বলার সুযোগ পাবে যে এখানে সেনা শাসন চলছে। তাই তাদের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আবার বাংলাদেশ তার পুরোনা দাবি করতে পারে।

তবে সামরিক সরকার শাসনে থাকা বা না থাকা দিয়ে তো রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের সম্পর্ক মিয়ানমার রাষ্ট্রটির সঙ্গে। আমাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তরাষ্ট্রীয় আলোচনা চলছে। শাসকের রদবদলে এর হেরফের হওয়ার কথা না। তাদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয় উল্লেখ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে কড়া ভাষায় সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করেছে। ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কূটনৈতিক এসব আনুষ্ঠানিক আচরণের পর দেখা দরকার তারা কাজটি কী করছে। আর তাদের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হতে হবে। এখন তো মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এমনটা হলে বাংলাদেশের সেই সুযোগ নেওয়া উচিত। আর এই নিষেধাজ্ঞার শর্তের মধ্যে যেন রোহিঙ্গাদের বিষয়টি থাকে, সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে।

এক বছর জরুরি অবস্থা চলবে। এ নিয়ে কী আমরা বসে থাকব? নিশ্চয়ই না। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যে অবস্থান আগে নিয়েছিল, সেখান থেকে এক চুল সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এখন বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের অবস্থান আরও জোরালোভাবে বলার সুযোগ এসেছে।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়