Thank you for trying Sticky AMP!!

জাবিতে 'আন্দোলন ঠেকাতে' কর্তৃপক্ষের মামলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট চলাকালে এক সহকারী প্রক্টরকে আহত করার অভিযোগে অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশুলিয়া থানায় এ মামলা করা হয়। তবে আন্দোলন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ এই মামলা করেছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মামলার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ‘কথিত’ আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ‘অচল’ করে দিতে পুরোনো কলাভবনের ফটকে তালা দেয়। এ সময় পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরীর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নজির আমিন চৌধুরীকে উদ্ধার করতে যান। তাঁকে উদ্ধারের পর আন্দোলনকারীরা মহিবুর রৌফকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এ সময় মহিবুর রৌফকে ‘হত্যার উদ্দেশে সূক্ষ্ম ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত’ করা হয়। পরবর্তীতে তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে সূক্ষ্ম ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোনো ধরনের আঘাত করা হয়নি বলে জানান নজির আমিন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কর্মসূচি চলাকালে কেউ মহিবুর রৌফকে আঘাত করেনি। উল্টো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি হুট করে এসে আমাকে টানাহ্যাঁচড়া করা শুরু করেন। একপর্যায়ে আমি মাটিতে পরে যাই। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প সাজাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

মামলার বিষয়ে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডবিধির ১৪৩,৩২৩, ৩২৪,৩০৭ ও ৩৪ ধারায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তের কাজ চলছে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে দমন করতে এই ‘গায়েবি’ মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। আজ বিকেল চারটায় সংবাদ সম্মেলনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘উপাচার্য ফারজানা ইসলাম আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে তদন্তের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি আমরা। আন্দোলন দমন করতে এর আগে নানা পাঁয়তারা করেছে প্রশাসন। এবার মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র মারা যান। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করতে শুরু করেন। সেই আন্দোলন দমন করতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল কর্তৃপক্ষ। এই প্রশাসন মামলাবাজ। নিজের দুর্নীতি ও অপারগতা ঢাকতে বারবার মামলা করছে।’ সংবাদ সম্মেলনে যেকোনো সময় উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অবরুদ্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে চলমান অবরোধ-ধর্মঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ও সন্ধ্যাকালীন কোর্সের ক্লাস-পরীক্ষাও ধর্মঘটের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২৪ অক্টোবর থেকে কার্যালয়ে যাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) হস্তক্ষেপ কামনা করার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়া সংকট নিরসনে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে শিগগিরই আচার্যের কাছে আবেদন করার কথা জানানো হয়েছে। আজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অজিত কুমার মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে উপাচার্য, আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে শিক্ষক সমিতির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এতে তিন পক্ষই সংকট নিরসনে আচার্যের হস্তক্ষেপের বিষয়ে একমত হয়েছেন।