Thank you for trying Sticky AMP!!

জাবি ৩৮তম আবর্তনের অন্য রকম বর্ষপূর্তি উদযাপন

জাবি ৩৮ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা সহায়তা দিয়েছেন অনেককেই। ছবি: সংগৃহীত

২৬ এপ্রিল ২০০৯ । এই দিনে সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রাখেন ৩৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা। উচ্ছলতা আর ভালোবাসা দিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র সব ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা দখল করে নেন তাঁরা।

পাঁচটি বছর ক্যাম্পাসকে মুখরিত করে ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ৫ম সমাবর্তনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণ থেকে বিদায় নেন। ক্যাম্পাসে থাকাকালীন সেখানেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে প্রতিটি বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হতো। কেক কাটা, রঙের ফোয়ারা আর সন্ধ্যার পর মুক্তমঞ্চের কনসার্টে সবার একসঙ্গে আনন্দ-উল্লাস ছিল বর্ষপূর্তির মূল আকর্ষণ। গত বছর রোজা থাকায় ঢাকাতেই সবাই একসঙ্গে ইফতার করে বর্ষপূর্তির পাশাপাশি ছোটখাটো একটা রিইউনিয়ন করে ফেলেন!

যথারীতি এবারও এপ্রিল মাসের শুরুতে সবার মনেই একটা উচ্ছ্বাস জমতে থাকে ২৬ এপ্রিল একাদশ বর্ষপূর্তিকে ঘিরে। করোনাভাইরাসে ঘরবন্দী আমরা সবাই ধারণাই করে নিয়েছিলাম, এবার হয়তো বর্ষপূর্তির প্রোগ্রামটা পিছিয়ে যাবে। কিন্তু এর মধ্যেই একদিন বন্ধু ফাহাদ আব্দুল্লাহ ও মিরাল সারোয়ার আমাদের 'র‍্যাগ ৩৮ অফিশিয়াল পেজ'-এর ফেসবুক গ্রুপে একটা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সেটা ছিল, এবারে বর্ষপূর্তি হবে মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে। অনেকেই সাড়া দেন এতে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ ভালো একটা অঙ্কের টাকা ওঠে। এবার আলোচনা হয় কীভাবে এই সহায়তা দেওয়া হবে—ত্রাণ, নাকি অর্থ সহায়তা?

পরিবেশ-পরিস্থিতি, প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিবেচনা করে স্থির হয়, ত্রাণ বিতরণের পরিবর্তে অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে। এতে যেমন ঝুঁকি কম, তেমনি যাঁদের সহায়তা করা হবে, তাঁরাও তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী টাকাটা খরচ করতে পারবেন।

জাবির ৩৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস জীবন শুরু করেন ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর শুরু হলো সহায়তা কার্যক্রমের আওতাভুক্ত পরিবারের তালিকা তৈরি। মোটামুটি ৮৫টা পরিবারের একটা তালিকা করা হলো যাতে প্রথমেই ছিল ৩৮তম আবর্তনের যেসব বন্ধুর পরিবার এই মুহূর্তে সংকটে আছে, তারা। এরপর একে একে ক্যাম্পাসের ক্যানটিন বয় থেকে শুরু করে বটতলার চায়ের দোকানি খালা থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা মামা—অনেককেই এর অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এরপর পর্যায়ক্রমে বিকাশের মাধ্যমে বা হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হলো সহায়তা। ৩৮তম আবর্তনের পক্ষ থেকে এর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন ফাহাদ আব্দুল্লাহ, মিরাল সারোয়ার, রাকিবুজ্জামান বিজু ও জুবায়ের অনীক।

দেশ যাচ্ছে এখন চরম দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে। ৩৮-এর শিক্ষার্থীরা এর মধ্যেও কিছু মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে সৌভাগ্য দিয়ে রাঙিয়ে নিলেন তাঁদের একাদশ বর্ষকে। আমাদের আশা, এভাবেই এগিয়ে আসুক দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ এবং প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। 'মানুষ মানুষের জন্য' ভাবনাকে অন্তরে লালন করে এগিয়ে আসুক মানবতার পথে।

লেখক : শিক্ষক