Thank you for trying Sticky AMP!!

জীবনের পরীক্ষার মুখোমুখি এসএসসি পরীক্ষার্থী সাঈদ

সাঈদ মুনতাসির

আর কদিন পরই এসএসসি পরীক্ষা। তাই চলছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেছে সব। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। এখন আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দিন কাটছে সাঈদের।

পুরো নাম সাঈদ মুনতাসির সাব্বির। বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলা সদরে। পাইকগাছা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা তার। দুই ভাইবোনের মধ্যে সাঈদ বড়। বাবা মুনসুর আলী সরদার দিনমজুর। স্থানীয় একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। মা আকলিমাও পড়ালেখা করেননি। তবে তাঁদের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করবেন। কিন্তু তাঁদের ওই স্বপ্নও এখন ধূলিসাৎ হতে চলেছে।

সাঈদের মা-বাবা ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। জোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল সাঈদ। ৮ জানুয়ারি সকাল আটটার দিকে প্রাইভেট পড়ে সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিল সে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কাছে পৌঁছালে ঈগল পরিবহনের একটি বাস সাঈদকে ধাক্কা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে প্রায় ৩০০ গজ দূরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে আইসিইউ না থাকায় তাকে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক দিন পর সেখান থেকে তাকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছে সাঈদ।

আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউর প্রধান মল্লিক মনিরুজ্জামান জানান, সাঈদের অবস্থা সংকটাপন্ন। তার এখনো চেতনা ফেরেনি। সিটি স্ক্যান করে দেখা গেছে, মাথার খুলি ফেটে গেছে। মাথার বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমে আছে। অনেকগুলো স্নায়ু নষ্ট হয়ে গেছে। কবে চেতনা ফিরবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। ওই চিকিৎসার খরচও ব্যয়বহুল।

আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউর সামনে কথা হয় সাঈদের মা আকলিমার সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, তাঁদের জমিজমা বলতে কিছু নেই। তার স্বামী যে আয় করেন, তা দিয়েই কোনোরকমে চলে সংসার। সাঈদের স্কুলের ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করতেও সাহায্য নিতে হয়েছিল অন্যের। এখন ছেলের চিকিৎসায় কী করবেন, তা বুঝতে পারছেন না তিনি।

সাঈদের এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখছে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাইকগাছা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন শেখ বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইছেন। তিনি বলেন, প্রথমেই ব্যক্তিগতভাবে সাঈদের বাবাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে খুলনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা চাঁদা তুলে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পরপরই উপজেলায় বড় আন্দোলন হয়েছে। সব স্কুলের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় বের হয়ে আন্দোলন করেছে। শিক্ষার্থীরা যে যা পারে, সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। স্কুলে স্কুলে টাকা তোলা হচ্ছে, কিন্তু এই সামান্য টাকায় ওর চিকিৎসার কিছুই হবে না।

সাঈদের মাথায় অস্ত্রোপচার করাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। এত টাকা কোথা থেকে আসবে, সেই চিন্তায় সবাই উদ্বিগ্ন। সাঈদের চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সবাই।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ২৭১৮৫০১০১৬৪০০, সোনালী ব্যাংক, পাইকগাছা শাখা, খুলনা।