Thank you for trying Sticky AMP!!

জোটসঙ্গীদের মন্ত্রণালয়ে বেশি পরিবর্তন

মন্ত্রিসভার বৈঠকে একসঙ্গে সবাই বসলেও কেউ জানতেন না মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের কথা। বৈঠক শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর তা জানাজানি হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার অনেকটা আকস্মিকভাবেই রাজনীতিতে কম চেনা তিনজন এবং এক প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রী করা নিয়ে আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার সবাইকে চমক দিয়ে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে আট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর বদল করা হয়।

রদবদলের এই প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকারের শরিক দল হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের মন্ত্রণালয়েই বেশি পরিবর্তন হয়েছে। এর বাইরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এক প্রতিমন্ত্রীকে আগের দায়িত্বে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পূর্ণ মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীসহ এখন মন্ত্রিসভার সদস্য দাঁড়াল ৫৩। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া পূর্ণ মন্ত্রী ৩৩ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৭ জন এবং উপমন্ত্রী ২ জন। মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা আছেন ৬ জন। এর বাইরে মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত আছেন এইচ এম এরশাদ। বর্তমান মন্ত্রিসভায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তিনজন, মহাজোট শরিকদের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন করে তিনজন সদস্য রয়েছেন। মহাজোট শরিকদের প্রায় সবারই দপ্তর পরিবর্তন হয়েছে।

আকস্মিক এই পরিবর্তন নিয়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সবারই জিজ্ঞাসা, হঠাৎ করে কেন এই পরিবর্তন? কেউ কেউ বলছেন বিভিন্ন ঘটনায় সমালোচনার কারণেই মূলত এই পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেওয়ায় এমনও কথা বলা হচ্ছে যে সেখানকার মন্ত্রীদের ক্ষমতা কমবে।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের বছরখানেক আগে মন্ত্রিসভায় যে রদবদল হয়েছে, তা আপাতত খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা আরও সম্প্রসারিত হতেই পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক মনে করেন, নির্বাচনের বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় শরিক দলগুলোকে বাদ দেবেন না। পরিবর্তন করলেও তাঁদের রেখেছেন বা রাখবেন। পাশাপাশি নিজের দল থেকে আরও নতুন মুখ যুক্ত করবেন। এ ছাড়া যেসব অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিন মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব নেই, সেসব এলাকার নেতাদের আনা হতে পারে।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেছেন, গত মঙ্গলবার শপথ নেওয়া চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে কে কোন দপ্তর পাচ্ছেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে রদবদল নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হওয়া নারায়ণ চন্দ্র চন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্যের পরপরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রদবদলে মহাজোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে সরিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী করা হয়েছে। আর বিমানমন্ত্রী করা হয়েছে নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া আওয়ামী লীগের সাংসদ এ কে এম শাহজাহান কামালকে।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এত দিন পুরো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এখন তিনি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে রাশেদ খান মেনন একাই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁর মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন না।

জোট সরকারের আরেক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এত দিন একাই তথ্যমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রণালয় চালিয়ে আসছিলেন। নতুন রদবদলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার মতে, তারানা হালিমকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা কার্যত কমেছে। এত দিন তিনি একটি বিভাগ একাই চালিয়েছেন। এখন একজন পূর্ণমন্ত্রীর অধীনে কাজ করবেন। এতে তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। মূলত যেসব মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী থাকে, সেখানে প্রতিমন্ত্রীর বেশি কিছু করার থাকে না। তবে প্রতিমন্ত্রী থাকলে পূর্ণ মন্ত্রী একধরনের চাপে থাকেন।

বিরোধী দল হলেও কার্যত সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে পানিসম্পদ থেকে সরিয়ে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এত দিন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মহাজোটের আরেক দল জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে করা হয়েছে পানিসম্পদমন্ত্রী।

সরকারি সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তার মতে, এই দুই মন্ত্রীর রদবদল বড় কিছু না হলেও সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমালোচনার মুখে ছিল।

নতুন মন্ত্রী হওয়া তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বারকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের অধীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ছিলেন তারানা হালিম। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন জুনাইদ আহ্‌মেদ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হওয়া নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া কাজী কেরামত আলীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এত দিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একাই দুই বিভাগ চালিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে।

গতকাল এই রদবদলের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কোনো কোনো কর্মকর্তা আকস্মিক এই রদবদলে বিস্ময় প্রকাশ করেন। রদবদলের তালিকায় থাকা একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতটাই গোপনীয়তার সঙ্গে করেছেন যে গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে একসঙ্গে থেকেও এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাননি।

রাশেদ খান মেননকে সরিয়ে দেওয়ায় অনেকে অবাক হয়েছেন। জানতে চাইলে নতুন সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রশাসন, সামনে জাতীয় নির্বাচন ইত্যাদি ভেবে হয়তো এটা যথাযথ মনে করেছেন। তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনের যে চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটা তিনি সফলভাবেই মোকাবিলা করেছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়েও গরিব, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন।

এদিকে গতকাল এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, টেলিকম বিভাগে অনেক সমস্যা রয়েছে। অনেক জটিলতার মধ্যে রয়েছে খাতটি। এটিকে টেনে তুলতে হবে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস তাঁকে সংবর্ধনা দেয়।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘টেলিকম ডিভিশনের ভেতরে ক্যানসারের মতো সমস্যা বিরাজ করছে, কিন্তু সেই সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

মন্ত্রিসভায় রদবদল ও আওয়ামী লীগের শরিক নেতাদের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ে বেশি পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শরিকদের এখানে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে হয় না। বাদ দিলে হয়তো সেটা বলা যেত।