Thank you for trying Sticky AMP!!

টাকা না দেওয়ায় হত্যার অভিযোগ

বৃষ্টি রানী চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

গত ১২ এপ্রিল বেলা সোয়া ১১টায় স্বামী সুদীপ রায়ের মুঠোফোন থেকে মায়ের সঙ্গে শেষবার কথা বলেন নারায়ণগঞ্জের টানবাজার সাহাপাড়ার গৃহবধূ বৃষ্টি চৌধুরী। ১০ লাখ টাকার জন্য স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁকে মারধর করছেন জানিয়ে কুমিল্লায় বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আকুতি জানান মায়ের কাছে। বেলা দেড়টায় সুদীপ রায় বৃষ্টির বড় ভাই মিঠুন চৌধুরীকে মুঠোফোনে জানান বৃষ্টি ‘আত্মহত্যা’ করেছে।

বৃষ্টি (২১) হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় সভা–সমাবেশে এসব কথা বলেছেন বৃষ্টির পরিবারের সদস্যরা। বৃষ্টির বাবা শ্যামল চৌধুরীর অভিযোগ, যৌতুক না পেয়েই সেদিন বৃষ্টিকে হত্যা করেছেন তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে শ্যামল চৌধুরী বলেন, মেয়ের বিয়েতে বরপক্ষের দাবি করা সাত লাখ টাকা ও ১৭ ভরি সোনা দিয়েছিলেন। এরপরও একে একে নানা দাবি মিটিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য তাঁদের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন বৃষ্টির স্বামী। সে টাকা না পেয়েই বৃষ্টিকে হত্যা করা হয়। বৃষ্টির বড় ভাই ও মামা দুলাল সাহার অভিযোগ, হত্যার দিন রাতেই বৃষ্টির স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদ ডেইজি সাহাকে আসামি করে হত্যা মামলা করতে চাইলেও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন আল আজাদ নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগের এজাহার তৈরি করেন।

বৃষ্টির মামা দুলাল সাহা বলেন, বৃষ্টি হত্যার পর তাঁর স্বামী ও শ্বশুরকে পুলিশ আটক করলে মধ্যরাতে বাবা ও ভাইকে দেখতে থানায় যান ডেইজি সাহা ও তাঁর স্বামী ব্যবসায়ী লিটন সাহা। সে রাতে ডেইজিকে গ্রেপ্তার না করে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন এসআই আজাদ।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক আসাদুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টির গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে সে (বৃষ্টি) আত্মহত্যা করেছে, এটা শতভাগ নিশ্চিত।’

বৃষ্টির প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দাবি করছে বৃষ্টির মৃত্যুর কারণ কোনোভাবেই আত্মহত্যা নয়। বৃষ্টি হত্যার খবর পেয়ে প্রথমেই তাঁর শ্বশুরের বাসায় ছুটে যান বৃষ্টির ফুফু শঙ্করী সাহা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যাবার পথেই সুদীপ আমাকে জানায়, বৃষ্টি ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু বাসার ভেতরে বৃষ্টিকে খাটে শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই।’

বৃষ্টির মৃত্যুর পরপরই ঘটনাটির তদন্ত করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা। সংগঠনটির জেলার সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, ‘আত্মহত্যা হলে মেয়েটির স্বামী কেন লাশ নামাবে? আর লাশই যদি নামাবে তাহলে কেন ডাক্তারের কাছে না নিয়ে ঘরে বসে ছিল? ঘটনার দিন রাতে পুলিশ টাকার বিনিময়ে এক আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে, এটা আমরা জেনেছি। শুনেছি, আসামিপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাল্টে দিয়েছে। আমাদের তদন্তে মনে হয়েছে, এটা হত্যাকাণ্ড।’

এস এম মালেহ রোডের হাজী গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সাততলায় ভাড়া থাকেন বৃষ্টির শ্বশুর সুভাষ সাহা। সে বাড়িতেই বৃষ্টির ছেলে আর্যকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমানে থাকছেন বৃষ্টির শাশুড়ি। গতকাল দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি দরজা খুলতে রাজি হননি। দরজার অপর প্রান্ত থেকে শিশুর কান্না থামাতে থামাতেই তিনি বলেন, ‘মৃত্যু সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’

টাকার বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেওয়া এবং বাদীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার সাজানোর অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আজাদ বলেন, ‘অভিযোগগুলো মিথ্যা। আমাকে হেয় করার জন্য এসব অভিযোগ।’ তিনি আরও জানান, ফাঁসে ব্যবহৃত কাপড়ের একটি টুকরো তিনি উদ্ধার করতে পেরেছেন। তবে গলায় জড়ানো অবস্থায় কোনো কাপড় তিনি খুঁজে পাননি।

সদর থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, বাদীপক্ষের অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।