Thank you for trying Sticky AMP!!

টিএসসিতে তারুণ্যের ইফতার উৎসব

প্রতিদিন বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জমে ওঠে ইফতারের আয়োজন। প্রথম আলো

সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। তবে রোদের উত্তাপ বিশেষ কমেনি। বেলা শেষের রোদ আলো-ছায়ার মনোরম ছক কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সবুজ মাঠে। সেখানে ছোট ছোট দলে গোল হয়ে বসেছেন তরুণেরা সামনে ইফতারসামগ্রী নিয়ে। সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষার সঙ্গে চলছে নানা প্রসঙ্গের গল্প–আড্ডা। পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকেই প্রতিদিন বিকেলে তারুণ্যের ইফতারির এই দৃশ্য টিএসসি চত্বরে।

বছরের অন্যান্য সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিএসসি চত্বরে চলে আড্ডা, গিটার বা তবলার সুরে গান কিংবা নানা প্রকার সামাজিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু রমজান মাসের বিকেলে টিএসসির পরিবেশে বদলে যায়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই চত্বর যেন ইফতারের উৎসবে পরিণত হয়।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা বাজতেই টিএসসিতে বাড়তে থাকে লোকসমাগম। তাঁদের অধিকাংশই তরুণ। টিএসসির বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, ভেতরের ক্যাফে কিংবা করিডরের জায়গা পরিপূর্ণ হতে থাকে ছুটে আসা তরুণদের উপস্থিতিতে। বোতলে করে ঠান্ডা পানি, জুস, পুরোনো পত্রিকা আর ইফতারসামগ্রী নিয়ে উপস্থিত হতে থাকেন তাঁরা। সেই ইফতার সংগ্রহ করা হয় টিএসসির সামনে বসা অস্থায়ী দোকান থেকে। কেউ আবার পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে ইফতার এনে বন্ধুদের নিয়ে মাঠের কোনো একটা স্থান নির্বাচন করে দল বেঁধে বসে পড়েন। নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মেতে ওঠেন কেউ কেউ, আবার কয়েকজন মিলে পত্রিকা বিছিয়ে ইফতার সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

টিএসসির সবুজ ঘাসে বসা ১২ জনের একটি দলকে পাওয়া গেল। ইফতারসামগ্রী মাঝখানে নিয়ে তাঁরা বসেন। জানা গেল, তাঁরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন সেঁজুতি ইসলাম বলেন, ‘এটা আমাদের তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের ইফতার নয়, তাই বিভাগের সবাই নেই। হুট করে কিছু বন্ধু মিলে প্ল্যান করলাম, আজ টিএসসিতে ইফতার করব, সেই জন্যই বসা। এখানকার অধিকাংশই আমরা হলে থাকি। পরিবার যেহেতু নেই, তাই কিছুটা পরিবারের আবহ পেতেই সবাই মিলে বসা।’

সেঁজুতি ইসলামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফারহান সিফাত বলেন, ‘আসলেই, আমাদের যাদের পরিবার দূরে। তাদের পরিবার এটাই। হয়তো বিভাগের বন্ধু, না হয় হলের বন্ধু। তবে বন্ধুরা মিলে টিএসসিতে ইফতার বেশ মজা হয়।’

কেউ কেউ চার-পাঁচজন বন্ধু নিয়েও ইফতার সাজান। তাঁদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে থাকেন। আবার কোনো দলে আছেন শুধুই রুমমেটরা। বিজয়-৭১ হলের একটি রুমের ছয় সদস্যকে পাওয়া গেল সেখানে। তাঁরা জানান, রুমে বসে ইফতারের থেকে টিএসসিতে এসে ইফতারের আনন্দই আলাদা। প্রাকৃতিক পরিবেশে সবুজ ঘাসে বসে বেশ ভালোই লাগে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও নানা সংগঠন এখানে ইফতারের আয়োজন করে থাকে। তাদের বক্তব্য হলো টিএসসির ইফতার মানেই অনন্য ভালো লাগা। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সামাজিক সংগঠনের ইফতার হচ্ছিল সেখানে। ২০ জনের দলটিতে ঢাকা শহর ও দেশের পরিবেশ নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ কথা হচ্ছিল। ইফতার শেষে তাঁরা তাঁদের বর্জ্য যথাস্থানে ফেলার জন্য উৎসাহিত করেন। জানা গেল, প্রতিবছরই তাঁরা সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেন। দলটির অন্যতম সদস্য শাফকাত মাসুম বলেন, টিএসসির ইফতার অনন্য ভালো লাগা কাজ করে।

তরুণদের পাশাপাশি ছোট আকারে কয়েকটি পরিবারও পাওয়া যায় টিএসসির সবুজ ঘাসে। তাদের অধিকাংশ খাবারই আবার বাসা থেকে বানিয়ে আনা। দুই বছরের ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন মুহিব হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলাম। সেই বছর ছয় আগেও রোজার সময় বন্ধুরা মিলে টিএসসিতে বসে প্রায় দিনই ইফতার সারতাম। পুরোনো বন্ধুরা নেই, তবে সেই অনুভূতি পেতে চেষ্টা করি। তাই সময় পেলেই কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে টিএসসিতে এসে ইফতার করি।’

সন্ধ্যা নামতেই মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। তোড়জোড় বেড়ে গেল টিএসসিতে আগত রোজাদারদের মধ্যে। সবাই একসঙ্গে মুখে তুলতে থাকেন সামনে রাখা খাদ্য ও পানীয়। প্রতিবছর এভাবেই একেকটি রোজার সন্ধ্যা এক আনন্দময় উৎসবে পরিণত হয় টিএসসির
সবুজ চত্বর।