Thank you for trying Sticky AMP!!

টিলার পাশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস

সুনামগঞ্জের ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকায় ‘ইংলিশ টিলার’ চারপাশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে মানুষজন। টিলার ওপর থাকা একটি জরাজীর্ণ পাকা স্তম্ভ সেই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে l ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার বাগবাড়ি এলাকায় টিলার চারপাশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৪০টি পরিবার। টিলার ওপর পুরোনো একটি স্তম্ভ ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন পরিবারগুলোকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় তারা সেখানেই রয়েছে।

পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাগবাড়ি এলাকার ওই টিলার উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট। টিলার ওপরে পাকা স্তম্ভটির উচ্চতা আরও প্রায় ৫০ ফুট। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক ব্রিটিশ নারী তাঁর স্বামীর স্মরণে প্রায় দেড় শ বছর আগে এটি নির্মাণ করেছিলেন। স্থানীয়ভাবে এটি ‘ইংলিশ টিলা’ হিসেবে পরিচিত। স্তম্ভটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, চার কোণ আকৃতির স্তম্ভে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্তম্ভটিতে বেশ কিছু আগাছাও রয়েছে। এটির পাশেই জর্জ ইংলিশ নামের এক ব্যক্তির সমাধি। সমাধির দেয়াল ভেঙে গেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই টিলা ও আশপাশে দুই একর ৬০ শতক সরকারি খাসজমি আছে। টিলার চারদিকের ঢালে ৪০ থেকে ৪৫টি পরিবার বাস করছে। এর মধ্যে কিছু পরিবার আছে নিজস্ব জমিতে। কয়েক বছর আগে টিলার উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়। ওই দিকের পরিবারগুলো রয়েছে বেশি ঝুঁকিতে। উত্তর দিকে একেবারে টিলা ঘেঁষে ঝুপড়ি ঘরে নয়টি পরিবারের বাস।

টিলার পাশের বাসিন্দা সুরুজ আলী (৪৫) বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কই যাইমু। কই থাকমু। এর লাগি বিপদ জাইনাও আছি।’ সুরুজ আলীর স্ত্রী নুর বানু বলেন, বৃষ্টির দিনে তাঁরা ভয়ে থাকেন। রাতে বৃষ্টি হলে ঘরে শিশুদের নিয়ে জেগে থাকেন। তাঁদের কোনো জায়গা-জমি নেই। ঝুঁকি জেনেও নিরুপায় হয়ে এখানে বসবাস করছেন।

পাশের ঘরের আরিফ মিয়া (৩৮) বলেন, এখানে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই দরিদ্র। নদীতে পাথর শ্রমিকের কাজ করেন। তাই অন্য কোথাও গিয়ে থাকার ব্যবস্থা করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।

টিলার পাদদেশে রয়েছে ৪০টি ঘর l ছবি: প্রথম আলো

পশ্চিম দিকের বাসিন্দা ময়না মিয়া (৬৭) দেশ স্বাধীনের পর এখানে এসে ঘর তুলেছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন। সরকারের কাছে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার আবেদনও করেছেন। কিন্তু টিলা ঝুঁকিতে থাকায় তাঁকে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে না। ময়না মিয়া বলেন, ‘আমরার আর কোনো জমিজিরাত নাই। তুইলা দিলে যাওয়ার জায়গা নাই। সরকার অন্যখানে আমরার থাকার ব্যবস্থা করলে যাইমু।’

বাগবাড়ি এলাকার কলেজছাত্র আমিরুল ইসলাম বলেন, টিলা ধসে পড়ার থেকেও এখন বেশি বিপদ হলো ওপরে থাকা পাকা স্তম্ভটি। এটি জরুরি ভিত্তিতে ভেঙে ফেলা উচিত। না হলে যেকোনো সময় এটি ভেঙে পড়তে পারে। তখন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাছির উল্লাহ খান বলেন, এবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর তিনি নিজে ওই এলাকায় গিয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের অন্যত্র সরে যেতে বলেছেন। মাইকিংও করা হয়েছে। বিপদ জেনেও মানুষ সরে যাচ্ছে না। এলাকাটি পৌরসভার ভেতরে, এখন পৌর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে। প্রয়োজনে অন্যত্র তাদের পুনর্বাসন করতে হবে।