Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিজিটাল দৈত্যের ভয়ে অনেকে সত্য লিখতে ভয় পান

কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে অনেকেই প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় এই লেখকের মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

অন্যদিকে একজন লেখকের প্রতিবাদী লেখার কারণে তাঁকে জেলে বন্দী রাখা, মৃত্যুর ঘটনা তথা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালো দিক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তাঁরা এই আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। এই আইনের কারণে অনেক লেখক আজকাল সত্য লিখতে ভয় পান বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

লেখক ও ব্লগার মারুফ রসুল তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করার যে দুঃশাসননীতি সরকার গ্রহণ করেছে, তা থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনিক চরিত্র বোঝা যায়। বিনা বিচারে দিনের পর দিন কারাগারে আটক রেখে নির্যাতন করে লেখক মুশতাক আহমেদকে তো হত্যাই করা হলো।

গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক এফ এম শাহীন লেখেন, এই দেশে লিখে জেলখানায় মরতে হয়। চাপাতির কোপে মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়। মাথার ঘিলু বেরিয়ে আসে রাস্তায়।

যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই আইনের বাতিল চেয়ে গণমাধ্যমকর্মী প্রভাস আমিন লিখেছেন, তিনি কোনো ভয়ংকর সন্ত্রাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন লেখক, তাঁর অস্ত্র ছিল কলম। একজন লেখক, বিবেকবান মানুষ। কোনো অন্যায় হলে প্রতিবাদ করেন। মুশতাক আহমেদও তাই করেছেন।

এক গণমাধ্যমকর্মী তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, কারাগারে কীভাবে মৃত্যু হলো, সে তদন্তের আগে জরুরি হচ্ছে মুশতাক কীভাবে কারাগারে গেলেন, কার কারণে গেলেন, কার কারণে জামিন পেলেন না, সেটা জানা।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছাত্রনেতা অনন্ত ধামাই লিখেছেন, লেখালেখির কারণে মাসের পর মাস কারাভোগ এবং সেখানেই মৃত্যু। অথচ তিনি তো কাউকে খুন করেননি, চুরি করেননি, রাষ্ট্রের কিছু লুটপাট করেননি, দুর্নীতি করেননি। তাঁর অপরাধ, তিনি শুধু লিখেছিলেন।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী নাসরিন আক্‌তার তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করে লিখেছেন, জেলে থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ খুন হয়েছেন।

গণমাধ্যমকর্মী সুমিত্র নাথ লিখেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফেঁসে গিয়ে একজন লোক ‘নিরাপদে’ মরে গেলেন। এক নিরাপত্তা আইনের ফাঁদে কত লোককে এভাবে ফাঁসানো হচ্ছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

অনেকেই মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কেউ বলছেন, এই আইনের কারণে সাধারণ মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তাই অনেকের দাবি, ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক কালো আইন নিপাত যাক। বাক্‌স্বাধীনতা মুক্তি পাক।

শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসানের কথায়, ডিজিটাল আইনে লেখক-শিল্পীদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হচ্ছে।

মৃত্যু তো মৃত্যুই, এর শোধ কোনো কিছুতেই ফেরত পাওয়ার নয়—এমন মন্তব্য করে তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থী হাফিজ মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, যে ভূমিতে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই, সেখানে সেতু আর রাস্তার উন্নয়ন খাইয়ে পেট ভরে দেয় একদল। কেননা, উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়েই তো এসব লাশ পরিবহন করবে।

মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রথম আলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছেন, করছেন অনেকেই। নাদিম মাহমুদ লিখেছেন, এই লাশের দায় কিছুটা মিডিয়ার ওপরও বর্তায়। কারণ, তাঁরা নানাভাবে এই আইনের সমর্থন দিয়েছেন।

সারওয়ার চৌধুরীর মন্তব্য, কেন সবাই মিথ্যা বলে, কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে? উনি কারাগারে নিহত হয়েছেন। রাশেদ নামের একজন লিখেছেন, আমার সাহস থাকলে আমিও এই আন্দোলনে যুক্ত হতাম। কিন্তু আমার সে সাহস নেই। আমি একজন গতানুগতিক বাংলাদেশি। রসিদুল্লাহ নামের একজনের মন্তব্য, দেশের বুদ্ধিজীবীরা এই হত্যার দায় এড়াতে পারবেন না। এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের সব আদর্শ ধুয়েমুছে ফেলেছে।

ফখরুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, প্রতিবাদ চলুক সারা দেশে। আর কত মুশতাক খুন হবেন? মো. আবদুল মান্নান লিখেছেন, সামান্য কারণে র‍্যাব–পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার হাতে নাজেহালের সংখ্যা কম নয়। সবটা কাগজেও আসেনি। মানুষকে হয়রানির সংস্থা একটু বেশিই যেন। সবার আবার কাজ দেখানোর প্রবণতা।

মুজিব রহমান বলেন, তাঁকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। লেখকদের জীবন, চিন্তাশীল মানুষের জীবন কঠিন করে দিচ্ছে রাষ্ট্র। এই মৃত্যু শেষ নয়, চলমানই থাকবে। সুষ্ঠু ধারার গণতন্ত্র ফিরে না এলে এমন মৃত্যু চলতেই থাকবে। নুরুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, গ্রেপ্তার লেখক মুশতাকের মৃত্যু কারাগারে, ডিজিটাল দৈত্যের ভয়ে অনেক লেখক আজকাল সত্য কথা লিখতে ভয় পান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গত বছরের ৪ মে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মারা যান।