Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘ইচ্ছেমতো’ প্রয়োগ ভয় ধরিয়েছে: এমএসএফ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘ইচ্ছেমতো’ প্রয়োগ মুক্তচিন্তায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

এই আইনে চলতি মার্চ মাসে ৯টি মামলা ও ৯ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। এ ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনায়ও উদ্বেগ জানিয়েছে তারা।

মার্চ মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এমএসএফ আজ বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ ও স্থানীয় অধিকারকর্মীদের মাধ্যমে যাচাইয়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

মার্চে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ‘বেড়ে যাওয়ায়’ মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে এমএসএফ বলছে, ইচ্ছেমতো এ আইনের প্রয়োগ মুক্তচিন্তক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং তাঁদের যেভাবে হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত।

Also Read: বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অনেকটাই খর্ব

এমএসএফ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চে দেশে অন্তত সাতটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে লুটপাট ও প্রতিমা ভাঙচুরও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাস্তায় বালু ফেলার জেরে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর এলাকার প্রাচীনতম কালীবাড়ি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে যুবলীগ সভাপতির পক্ষে মিছিলে না যাওয়ায় রূপসদী রাধাগোবিন্দ মন্দিরে আসা-যাওয়ার পথ বন্ধ করা এবং রাজবাড়ীর খাগজানা গ্রামে হামলার ঘটনায় মামলা হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলেও জানায় এমএসএফ।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বলেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশকে অস্থিতিশীল করাতে ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী শক্তির ইন্ধনে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ ও হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাকে ‘অপ্রত্যাশিতই ছিল না, বরং অনাকাঙ্ক্ষিতও ছিল’ বলে উল্লেখ করেছে এমএসএফ।

সংস্থাটির মতে, ‘বিক্ষোভকারীদের এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করলে উদ্ভূত পরিস্থিতি বহুগুণে এড়ানো যেত বলে আমরা মনে করি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদেরও পুলিশের সঙ্গে হামলা করতে দেখা যায়, যা অনভিপ্রেত ও অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

মার্চ মাসে চারজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তাদের হিসাবে এ মাসে কারা হেফাজতে অন্তত ৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে, ৩৪২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১২টি, ৮৯ জন নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে দুজন নিহত ও দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে জোরপূর্বক ভারতে আটক করে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মার্চে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ ও ‘ভয়াবহ’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হলো, দেশের মানবাধিকার রক্ষায় একটি গ্রহণযোগ্য মান বজায় রাখা ও প্রসার সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যকীয়।’

করোনা সংক্রমণকালে মানুষের জীবনের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার আরও আন্তরিক ও দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করেছ এমএসএফ।