Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিটিএইচ লাইসেন্স পেল দুই প্রতিষ্ঠান গোপনে

অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অতি গোপনে দুটি প্রতিষ্ঠানকে কেব্ল সংযোগ ছাড়াই টিভি অনুষ্ঠান বিতরণের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ডিটিএইচের (ডাইরেক্ট টু হোম) লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। ৩২টি আবেদনের মধ্যে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো কমিউনিকেশন এবং বায়ার মিডিয়া লিমিটেড নামে দুই প্রতিষ্ঠানকে এই লাইসেন্স দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে ডিটিএইচ লাইসেন্স দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে। ওই সূত্রটি আরও জানায়, নতুন করে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ ব্যাপারে সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার হওয়ায় লাইসেন্স দিলে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ জন্য সবকিছু থেমে আছে। তবে এর পেছনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুরু থেকেই কেব্ল অপারেটররা ডিটিএইচ লাইসেন্স দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছেন। এর আগেও সরকার এ ধরনের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে আর এগোতে পারেনি। কিন্তু এবার লাইসেন্স দেওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো বিষয়টি কাউকে জানতে দেওয়া হয়নি।
কেবেলর মাধ্যমে টিভি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ টিভিতে কেব্ল সংযোগ রয়েছে। প্রতি মাসে প্রতিটি টিভি থেকে আদায় করা হয় গড়ে ৩০০ টাকা করে। এ হিসাবে মাসে আদায় হয় কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকা। এ খাতে বছরে বাণিজ্য দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোয়াবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার পারভেজ বলেন, ডিটিএইচ চালু হলে অপারেটরদের ব্যবসা চলে যাবে ডিটিএইচ প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। তখন হাজার হাজার কেব্ল অপারেটর বেকার হয়ে যাবেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ১৪টি শর্তে এ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫০টি চ্যানেল ডাউনলিংক করতে পারবে। এর বেশি চ্যানেল ডাউনলিংক করতে হলে আলাদা অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স ফি বাবদ দুই কোটি টাকা জমা দিতে হবে। এর বাইরে জামানত হিসাবে দিতে হবে আরও দুই কোটি টাকা। অনুমতি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে কার্যক্রম শুরু না করলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। কেউ বিদেশি বিনিয়োগ করলে সেই বিনিয়োগকারীকে ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার দেওয়া যাবে না। সরকার চাইলে যেকোনো চ্যানেল বা চ্যানেলের নির্ধারিত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যবস্থায় কোনো সম্প্রচার কোম্পানি বা কেব্ল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানকে ২০ শতাংশের বেশি অংশীদার করা যাবে না।
সূত্র জানায়, দেশে এভাবে টিভি অনুষ্ঠান বিতরণের কোনো নীতিমালা নেই। লাইসেন্সের শর্তে বলা হয়েছে, এ-সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা বা নীতিমালা জারি হলে তা ভূতাপেক্ষা কার্যকর হয়ে যাবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশে প্রথম ডিটিএইচ প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ওই সময় এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তবে কেব্ল অপারেটরদের সংগঠন এ উদ্যোগের বিরোধিতা শুরু করে। ওই সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি কয়েক দফায় বৈঠক করে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিটিএইচ লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তখন শীর্ষস্থানীয় তিনটি শিল্প গ্রুপের পক্ষ থেকে ডিটিএইচ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়। ডিটিএইচের জন্য সর্বশেষ জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা ছিল ৩২টি।
লাইসেন্সপ্রাপ্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহ নিবন্ধন পরিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেক্সিমকো কমিউনিকেশন নামের প্রতিষ্ঠানটি গত ২৮ জানুয়ারি গঠন করা হয়েছে। কাগজপত্রে কার্যালয় হিসেবে গুলশান-২-এর ৩৫ নম্বর সড়কে একটি বাড়ি দেখানো হলেও সেখানে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জানান, এটি বেক্সিমকোর গুলশান কার্যালয়।
যোগাযোগ করা হলে বেক্সিম গ্রুপের মুখপাত্র আসিফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এ প্রযুক্তির অনুমোদন তাঁরা পেয়েছেন। আশা করছেন, আট মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন।
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রতিষ্ঠান বায়ার মিডিয়া লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে গঠিত হয়েছে এ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। বায়ার মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম হাসিবুল আহসান খান। অন্য তিন পরিচালক হলেন সৈয়দ আতাউর রহমান, আহমেদ ইয়াসির জামিল ও জাহিদ হোসেন। বনানীর ২৭ নম্বরে সড়কে তাঁদের কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বসেন উত্তরা এলাকায়।
যোগাযোগ করা হলে হাসিবুল আহসান খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম ১৫০টি চ্যানেল নিয়ে তাঁরা ব্যবসা শুরু করবেন। এ ধরনের ব্যবসার ব্যাপারে তাঁদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই বলে তিনি জানান। কিসের ভিত্তিতে লাইসেন্স পেয়েছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আবেদন করেছিলাম, কীভাবে আমাদের লাইসেন্স দেওয়া হলো সেটা মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।’
ডিটিএইচ কী: কেব্ল সংযোগ ছাড়াই স্যাটেলাইট টিভি দেখার উন্নত প্রযুক্তি হচ্ছে ডাইরেক্ট টু হোম বা ডিটিএইচ। এ প্রযুক্তিতে গ্রাহক সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে অনুষ্ঠান নিজের টিভিতে ডাউনলিংক করতে পারেন। এই প্রযুক্তিতে ছবি ও শব্দ আসে কেব্ল সংযোগের চেয়ে দ্রুতগতিতে। প্রতিটি চ্যানেলের ছবি ও শব্দের মান থাকে একই রকম।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে টাটা স্কাই, রিলায়েন্স, ডিশ টিভি, এয়ারটেলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ডিটিএইচ সেবা দিচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানের সেট টপ বক্স পাওয়া যায়। অবৈধ হলেও রাজধানীর অনেক বাড়িতে ডিটিএইচ সংযোগ রয়েছে।