Thank you for trying Sticky AMP!!

ডেঙ্গুর প্রকোপে ঈদ সামনে রেখে বিশেষ সতর্কতা

প্রতি দুই মিনিটে তিনজনের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, ঢাকার বাইরে জেলাগুলোতে রোগী তত বাড়ছে। গতকাল বুধবার শুধু বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩৬ জন রোগী ভর্তি ছিল।

ডেঙ্গু রোগী ভর্তির এ তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। তাতে দেখা যাচ্ছে, গতকাল ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫৩ জন রোগী ভর্তি ছিল। ঢাকার বাইরে দিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের ছুটি সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছয় দফা করণীয় ঘোষণা করেছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা সাংবাদিকদের বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সারা দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার উপকরণসহ (কিট) অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালকে যথাক্রমে ১০ লাখ ও ২ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

রোগী বেড়েই চলেছে
সরকারি হিসাবে গতকাল সারা দেশে ২ হাজার ৪২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ১০১ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এই সংখ্যা ছিল ৬ আগস্টের চেয়ে বেশি।

গত এক সপ্তাহে প্রতিদিনই ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। ১ আগস্ট রোগী ছিল ৫৯০ জন। ৬ আগস্ট তা হাজার ছাড়িয়ে যায়।

গতকাল ঢাকার বাইরে সব জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী ভর্তি ছিল। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশি রোগী ভর্তি ছিল বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ১১টি হাসপাতাল এবং ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীর তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্যই প্রতিদিন প্রকাশ করা হচ্ছে।

কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। এ বছর আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৩৪০ জন। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে রোগী ছিল ১৬ হাজার ২৫৩। আর আগস্টের প্রথম সাত দিনেই ভর্তি হয়েছে ১৫ হাজার ৮৭৯ জন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাস্তবে রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগে আসা রোগী, বহু বেসরকারি হাসপাতালের রোগী ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে আসা রোগীর তথ্য কারও কাছে নেই।

আরও মৃত্যু
গতকাল বিকেলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, ওই রোগী আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

রাজধানীর একটি হাসপাতালে এবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া সাতজন রোগী মারা গেছে। এর আগে ওই হাসপাতাল থেকে তিনজনের তথ্য পেয়েছিল প্রথম আলো। গতকাল রাত পর্যন্ত প্রথম আলো মোট ১১৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছে। সরকারি তথ্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো এ হিসাব পেয়েছে। আর সরকারি হিসাবে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।

>এক সপ্তাহে প্রতিদিন ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে
গতকাল ঢাকার বাইরে সব জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী ভর্তি ছিল
ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ও অফিসে এডিস মশা বাড়ার আশঙ্কা আছে
ডেঙ্গু চিকিৎসায় সারা দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে অধিদপ্তর


অনেক উপজেলায় কিট নেই
গতকাল সংবাদ ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেছিলেন, উপজেলা হাসপাতালে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই সব হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্ত করার কিট এখন আছে।

গতকাল প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা বগুড়া, বান্দরবান, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, যশোর ও খুলনা জেলার ৩৭টি উপজেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের কিট আছে কি না, তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বগুড়ার ১১ ও কুষ্টিয়ার ৫ উপজেলাতে কিট নেই। যশোর সদর ছাড়া অন্য ছয় উপজেলাতেও তা নেই। খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা হাসপাতালে কিট নেই। বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় আছে। চাঁদপুরের দুটি ও পটুয়াখালীর একটি উপজেলায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। এই তিনটি উপজেলায় কিট আছে।

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গতকাল দুপুরে বলেছিলেন, কিট নেই। তিনি সন্ধ্যায় ফোন করে বলেছিলেন, পাঁচটি কিট এসেছে।

ঈদের ছুটিতে করণীয়
ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘ পথযাত্রার ধকল আছে, যা রোগীর জন্য খারাপ। আবার ঢাকায় চিকিৎসার যে সুযোগ আছে, তা অন্য শহর বা গ্রামে নেই। তবে ইতিমধ্যে যারা সুস্থ হয়ে উঠেছে, তারা যেতে পারে।’

ঈদের ছুটিতে বাড়িতে, অফিসে এডিস মশা বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা আছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এক সভায় ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে নাগরিকদের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে সব ধরনের টয়লেট ঢেকে রাখা, রেফ্রিজারেটরের ট্রে শুকিয়ে রাখা, এসির পাইপের পানিসহ যেকোনো পানি পরিষ্কার করে রেখে যাওয়া, সব ধরনের পাত্র পরিষ্কার করে উল্টিয়ে রেখে যেতে হবে, ফুলের টব বা ট্রের পানি ফেলে যেতে হবে এবং পানির ট্যাংকের ঢাকনা বন্ধ রেখে যেতে হবে।