Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা: সতর্ক হতে হবে নিজেদেরও

আমাদের সামনে একটা ভয়ংকর সময় আসতে যাচ্ছে। বর্তমানে পুরো পৃথিবীই এক বিশাল পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সবার মধ্যেই আতঙ্ক। প্রতিনিয়ত এই আতঙ্ক আর ভয়াবহতা ছড়িয়েই যাচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বেড়ে যাচ্ছে মৃত্যুর মিছিলে মানুষের সংখ্যা।

বলা হচ্ছে, চীনের হুবেই প্রদেশের দক্ষিণ সমুদ্রের একটি পাইকারি মাছের বাজার থেকে ছড়ায় এই করোনাভাইরাস। সামুদ্রিক বেশ কিছু প্রাণী এই ভাইরাস বহন করে। ভাইরাস বসবাস করতে পারে মানুষের মধ্যেও।

করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে চীনেই। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১১ হাজার। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছে। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তারা সুস্থ হয়েছে। যাদের অন্য কোনো রোগ রয়েছে বা বয়োবৃদ্ধ, তাদের আক্রান্ত হওয়ার পর মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

বেশির ভাগ নতুন রোগী আগে থেকেই চীনে ছিল। শুধু চীন তাদের নজরদারি বাড়ানোর পর শনাক্ত হয়েছে। ফলে মহামারিটির বিস্তার সম্পর্কে খুবই কম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব তথ্য–উপাত্তের কথা বলা হচ্ছে, সম্ভবত এর চেয়ে বেশি মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চীনের বাইরেও যেভাবে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে, তাই ধারণা করা হচ্ছে চীনের সরকার আক্রান্ত মানুষের যে সংখ্যা বলছে, আসল রোগীদের সংখ্যা তার দ্বিগুণ। তবে তার মানে এই নয় যে মহামারিটি দ্বিগুণ আকৃতির হয়ে গেছে। এরপর পুরো বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

এখন কথা হচ্ছে, আমরা খাদ্যে যে পরিমাণে ভেজাল খাই, তাতে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরের যন্ত্রাংশের অবস্থা যে কতটা খারাপ, তা কে জানে!

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। দুঃখের বিষয় হলো তাঁরা ইতালি বা জার্মানি থেকে এলেন কিন্তু কীভাবে তাঁরা বিমানবন্দর থেকে এলেন? যদি আমাদের দেশে করোনাভাইরাস প্রবলভাবে সংক্রমিত হয়, তবে কী হবে? অনেকের মনেই এ নিয়ে নানান প্রশ্ন! আসলে কী হবে, সেটা তো অনেক পরের বিষয় কিন্তু আমাদের আগে থেকে প্রস্তুতি যে নিতে হবে, তার কী হচ্ছে সেটা জেনে দেখা উচিত।

আর এখন সময়টাও খুবই ভয়ানক। সাধারণত এপ্রিল মাসের দিকে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা যায়। যদি এই সময়ে মাত্রার কিছুটা কমতি থাকে। সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে এর প্রকোপ দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা হয় আগস্ট মাসে।

এখন কথা হচ্ছে, যদি করোনা আর ডেঙ্গু একই সময়ে সংক্রমিত হয়, তখন কী হবে? ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসতে শুরু করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই ধরনের চিন্তা কি নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের কেউ ভাবছেন? করোনায় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষতি হয় বা মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ডেঙ্গু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কতটা ভয়ংকর হবে যদি দুইটা একসঙ্গে আঘাত হানে!

প্রতিকার করে আর কতটুকু কী করা যাবে? করতে হবে প্রতিরোধ। করোনা কিংবা ডেঙ্গু কোনোটাই যেন দেশে না আঘাত হানতে পারে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। করোনা প্রতিরোধের জন্য আমাদের দেশে বিদেশগমনের ওপর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে করোনা নিয়ে যাতে কেউ ঢুকতে পারে, সে জন্য স্ক্যানিং করা হচ্ছে।

চারটি হাসপাতাল তৈরি রাখা হয়েছে করোনাভাইরাসের জন্য। এটা আসলেই একটা রাষ্ট্রীয় বিষয়। রাষ্ট্র যতটা তৎপর হবে, ততটা ভালো ফলাফল আসবে।

সতর্ক হতে হবে নিজেদেরও। জানতে হবে করোনা সম্পর্কে। বেশি বেশি হাত ধুতে হবে। যথাসম্ভব গরম পানি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, মুখে মাস্ক করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু দুঃখের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাজার থেকে মাস্ক হাওয়া। কয়েক গুণ বেশি দামে এই মাস্ক বিক্রি করা হচ্ছে। এখন অবশ্য মাস্ক একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। পৃথিবীতে উৎসবের সময় সব পণ্যে ছাড় দেওয়া হয় আর আমাদের যেকোনো উৎসবের জন্য সব খারাপ সামগ্রী রেখে দেওয়া হয় বেশি দামে বিক্রি করার জন্য।

গত বছর ডেঙ্গুর সময় ৮০ টাকার মশার ওষুধ ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আমাদের মনমানসিকতার এমন অবক্ষয় আসলেই মেনে নেওয়া যায় না।

সামনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সময় এসে গেছে। তাহলে কি এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত নয়? এখনই মশাদের আস্তানা তছনছ করে দেওয়া উচিত। গতবার মশার ওষুধ দিতে অনেক দেরি করা হয়েছে। আর মশার ওষুধ দেওয়া হয়েছে মাত্রা কমিয়ে। মশার ওষুধের কার্যকারিতা কম থাকায় তা ছিটানোর পর মশারা সুন্দরভাবে পালিয়ে বাসায় বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। গত বছর ডেঙ্গু সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার আকার ধারণ করেছিল, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। রোগের উপসর্গ বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। জ্বর না হয়েও ডেঙ্গু হয়েছে অনেকের। আচমকা প্লাটিলেট নেমে যেতে দেখা গেছে কারও কারও। ভয়ানক এক অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় গত বছরের ডেঙ্গু। এত ভয়াবহতার পরও এই রোগের মূল কেন্দ্রবিন্দু ঢাকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। গত বছর যেখানে এত ভয়ানক আকার ধারণ করল, তখন এই বছর তো উচিত ছিল আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণের। কিন্তু এখনো তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

আর কর্তৃপক্ষকে দোষ দিয়ে লাভ কী? ডেঙ্গু তো ময়লা পানিতে জন্মায় না। ডেঙ্গুবাহক এডিস মশা জন্মায় পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে। আমাদের বাড়িতে তো এই অবস্থা প্রায়ই থাকে। এসব জায়গা থেকে রোগ ছড়ায়। নিজেরা যদি সজাগ না থাকি তবে অন্য কেউই কিছু করতে পারবে না।

গত বছর ডেঙ্গুতে আমাদের দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ, মারা গেছেন প্রায় ৩০০ মানুষ, যদিও সরকারি হিসাব বলে এই সংখ্যা নাকি ১৫০। কিন্তু কথা হচ্ছে, একজন মারা গেলেও তো গেছে। প্রতিটি মানুষের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ। একেকটা জীবন চলে যাওয়া মানে একটা পরিবারের আজীবনের কান্না।

এখন কথা হচ্ছে কীভাবে আমরা করোনা বা ডেঙ্গু মোকাবিলা করব? করোনার তো এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা হয়নি। কোনো চিকিৎসা হয়তো নেই, কিন্তু সুস্থ রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।

কিন্তু করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিয়েতনাম দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে। সেখানে ১৬ জন করনায় আক্রান্ত হয় এবং সবাই শতভাগ সুস্থ হয়েছে। নতুন করে সেখানে কেউ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে না। কীভাবে ভিয়েতনাম এই অসাধ্যসাধন করেছে, সেটা জেনে দেখা দরকার। আমাদের উচিত প্রয়োজনে সেখানে কোনো টিম পাঠিয়ে তাদের চিকিৎসা সম্পর্কে জানা। গবেষণা থেকে জানা যায়, কিছু ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে তারা এই সফলতা পেয়েছে। সেই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করা উচিত।

এরপরে আসি ডেঙ্গু নিয়ে, ডেঙ্গু চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া এমন একটি দেশ, যারা কিনা সারা বছর ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকে। সেখানে মানুষ সারা বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তবে তাদের এ ক্ষেত্রে সফলতার হার অনেক বেশি। তাদের হাসপাতালগুলোয় দারুণ সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আমরা নিজেরা কিছু উদ্ভাবন করতে না পারি, কাউকে অনুসরণ তো করতে পারি!

আমাদের এখনই জেনে রাখা উচিত ভিয়েতনাম আর মালয়েশিয়া কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেসব জেনে আমাদের একটা মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। কারণ, বড্ড কঠিন এক সময়ের মোকাবিলা করতে হবে হয়তো আমাদের। প্রস্তুত থাকতে হবে পুরো দেশের।

*লেখক: কলামিস্ট