Thank you for trying Sticky AMP!!

ড্রাগন চাষে সফল বাহে কৃষি ফার্ম

২০১৬ সালে দেড় বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগনের চাষ শুরু। ১৫ মাসের মধ্যেই পাওয়া যায় ফল। প্রথম দফায় বিক্রি তিন লাখ টাকা। এরপর আর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি রিয়াসত করিম। পরের বছরই আরও ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন তিনি। এখন বছরে বিক্রি প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

রিয়াসতের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার খাটুরিয়া গ্রামে। দেশের মাটিতে বিদেশি ফলের চাষ করে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। এখন সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করছেন তিনি। এক বিঘা জমিতে মাল্টা, আধা বিঘায় গ্রাভিওলা। সাথি ফসল হিসেবে আছে সফেদা, প্যাশন ফ্রুট, অ্যাভোকাডোসহ নানা দেশি-বিদেশি ফল এবং ঔষুধি গাছ। আরও ছয় বিঘা জমিতে করেছেন লিচু ও চার বিঘায় আমের বাগান। ২০ বিঘার বেশি জমি নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘বাহে কৃষি ফার্ম’। খামারে যুক্ত রয়েছেন আরও তিন অংশীদার। তাঁরা হলেন ইসমাইল হোসেন, ধনেশ্বর মল্লিক ও রেহানা ইয়াসমিন।

বাহে কৃষি খামারের উৎপাদিত ফল ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এখানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করা হয় তিন শ টাকায়। বাইরে এর দাম পাঁচ শ থেকে ছয় শ টাকা। এ খামার দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে মানুষ।

খাটুরিয়া গ্রামের মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘রিয়াসত করিমের উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা প্রথমে এটি পাগলামি মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন তাঁর বাগান ও ফল দেখে ধারণা পাল্টে গেছে। এখানে এলাকার ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের কর্মসংস্থান হচ্ছে।’

সম্প্রতি খামারে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগনগাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করছিলেন কর্মীরা।

খামার দেখতে এসেছেন জলঢাকা উপজেলার শালনগ্রামের মোনায়েম হোসেন। তিনি বলেন, ‘লোকমুখে শুনে বাগান দেখতে এলাম। একটি ড্রাগন ফল খেয়ে ভালো লাগল। তাই বাসার জন্য এক কেজি কিনলাম। এটি বিদেশি ফল। এখন নিজেদের জেলায় হচ্ছে। খুব ভালো।’

জেলা শহরের সবুজ পাড়া থেকে এসেছেন মিল্লাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও খামারে এসে ড্রাগন ফল কিনেছিলাম। আবার এসেছি। ফলগুলো সুস্বাদু এবং দেখতে আকর্ষণীয়।’

কথা হয় খামারের অংশীদার ধনেশ্বর মল্লিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে ১ হাজার ৭৫৫টি খুঁটিতে সাড়ে সাত হাজার ড্রাগনগাছ রয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার কেজি ফল সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তৃতীয় ধাপে আড়াই মেট্রিক টন ফল পেয়েছি। আরও দুই ধাপে ফল সংগ্রহ করা যাবে।’

কথা হয় খামারের আরেক অংশীদার ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন ড্রাগনের চাষ সম্পর্কে। বললেন, ড্রাগনগাছের শাখা থেকে নতুন চারা হয়। সেই চারা কেটে মাটিতে লাগালে নতুন গাছ হয়। একেকটা খুঁটিতে চারটি করে গাছ লাগানো যায়। বছরের যেকোনো সময় চারা লাগানো যায়। এপ্রিলে ড্রাগনের ফুল আসে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথমবার ফল সংগ্রহ করার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার এবং এভাবে প্রায় ছয় মাস ফল পাওয়া যায়। নভেম্বর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। পর্যায়ক্রমে ফলনও বৃদ্ধি পায়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দিনের সময় বৃদ্ধি করে সারা বছর এর ফলন পাওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করছি। সার হিসেবে হাড়ের গুঁড়া, কেঁচো, গোবর, খৈল ও বিভিন্ন গাছের লতাপাতা পচানো সার ব্যবহার করছি। কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম ও মেহগনি পাতার রস। পাশাপাশি ফলে ব্যাগিংও করা হচ্ছে।’

খামারের মালিক রিয়াসত করিম জানালেন শুরুর কথা। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ২২ বছর ধরে কৃষির সঙ্গে যুক্ত। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশিস কুমার সাহা আমাকে পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ড্রাগনের চারা দিতে চেয়েছিলেন। আমি সেটি তখন নিইনি। পরে ইন্টারনেটে ড্রাগন ফল নিয়ে বিস্তারিত জেনে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দেড় বিঘা জমিতে এর চাষ শুরু করি। যশোরের চৌগাছা থেকে চারা সংগ্রহ করে ২৫৬টি খুঁটিতে ১ হাজার ২৪টি ড্রাগনগাছের চারা রোপণ করি। এর ১৫ মাসের মধ্যে ফল পেতে শুরু করি। সে সময় স্থানীয় বাজারে কিছু ফল বিক্রি করি। ঢাকা ও সিলেটেও পাঠাই। প্রথম বছর দেড় বিঘায় ফল পাই তিন লাখ টাকার। পরের বছর বাগান বাড়াই। সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে বাগান করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এ বছর বাগানে তিন দফায় এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার কেজি ফল পেয়েছি। প্রতিবছর ফলন বাড়ছে। একটি বাগান থেকে কমপক্ষে ১০ বছর ফল পাওয়া যাবে।’

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কাশেম আযাদ বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। প্রতি বিঘায় প্রথমবারের ফল থেকেই দুই লাখ টাকার ঊর্ধ্বে আয় করা সম্ভব। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে আয় বাড়তে থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি প্রকল্পে ছোট ছোট বেশ কিছু ড্রাগন বাগান রয়েছে। পাশাপাশি জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে বাহে কৃষি ফার্ম, নীলসাগর অ্যাগ্রোসহ আটটি বাণিজ্যিক বাগান রয়েছে। এসব বাগানের সফলতার পর অনেকে বাগানের পরিধি বাড়াচ্ছেন।’