Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকায়ও বন্যার আশঙ্কা

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার পূর্বাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। এ সময় মাঝারি বা ভারী বৃষ্টি হলে পুরো রাজধানী শহরই তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় খালবিল ও জলাভূমি ভরাট করে প্রচুর আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠায় এবার বন্যা পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ফলে রাজধানীর নিম্নাঞ্চলের ৪০ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এই আশঙ্কা সম্পর্কে জানা যায়। ডেমরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করে বলে পাউবোর এক সমীক্ষায় জানা যায়। পাউবো বলছে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সবগুলো নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এই পানি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও ধলেশ্বরী নদীপথে ঢাকা এবং চারপাশের নদীগুলোয় ঢুকবে। নদীগুলোর পানি এখন পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে দ্রুত বিপৎসীমার ওপরে উঠে যেতে পারে। ২১ আগস্ট অমাবস্যার কারণে পানি বঙ্গোপসাগরে যাবে ধীর গতিতে। ফলে এই পানি সরতে সময়ও লাগবে।

পাউবোর ঢাকা কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৮৮ সালে ঢাকার চারপাশের নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে উঠে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের পানি নদীতে না গিয়ে উল্টো নদীর পানি নিম্নাঞ্চলে চলে আসে। ওই সময় পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে ছিল। এবারও সে রকম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাউবোর ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা সোমবার বিকেলে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী এলাকা পরিদর্শন করেন। বালু নদের পাড় থেকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, বালু নদের পানি বিপৎসীমার প্রায় তিন ফুট নিচে রয়েছে। তবে পূর্বাভাস যা পাওয়া গেছে, তাতে পানি দ্রুত বাড়বে। এই পানি ছয় ফুট বাড়লে ডেমরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরো পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সোমবার বিকেলে বালু নদের পানি ছিল ৭৩ সেন্টিমিটার নিচে। শীতলক্ষ্যা ৫৮, বুড়িগঙ্গা ১৩৮ এবং তুরাগ ৮৮ সেন্টিমিটার নিচে। কিন্তু এই পানি দ্রুত বাড়বে।

সোমবার মতিঝিলে পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনেও ঢাকায় বন্যার আশঙ্কার কথা জানানো হয়। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর নিম্নাঞ্চল পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে প্লাবিত হতে পারে।

নদীর পানি অনেক বাড়ার কারণে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ত্রিমোহিনী, দাসেরকান্দি, ফকিরখালী, বেরাইদসহ আশপাশের এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাবে। এসব এলাকা সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থার বাইরে। বর্ষাকালে প্রতিবছরই এসব এলাকা জলাবদ্ধ থাকে। এর বাইরেও ডেমরার আমুলিয়া, পাইটিসহ আশপাশের এলাকা এবং বাসাবো, মাদারটেক, নন্দীপাড়া ইত্যাদি এলাকা বন্যার কবলে পড়তে পারে। গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

১৯৮৮ ও ’৯৮-এর বন্যার সময় এসব এলাকায় আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এখন ডেমরা, আমুলিয়া, মান্ডা, বেরাইদ, সাঁতারকুল প্রভৃতি এলাকায় অন্তত ২৫টি বেসরকারি আবাসন প্রকল্প হয়েছে। পানি ধারণের নিচু জায়গা ভরাট করে এসব আবাসন প্রকল্প উঠেছে। ফলে নদীর পানি বাড়লে আগের তুলনায় আরও দ্রুতগতিতে এসব এলাকা তলিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে যেভাবে আবাসন প্রকল্পগুলো হয়েছে, তাতে করে বন্যা হলে নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করবে। অনেকে ঘর থেকেও বের হতে পারবে না। এসব এলাকার মানুষ পানি আসার আগেই যেন নিরাপদ জায়গায় চলে যায়, সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ঢাকার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা করতে হলে অন্তত ৪৫ শতাংশ (৬০ বর্গকিলোমিটারের মতো) খালি জায়গা ও জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। নিচু জায়গা ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) মানচিত্রে আছে। কিন্তু বাস্তবে সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি।

পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ছাড়া নদীর পানি বাড়ার কারণে সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী ও আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো। সাভার উপজেলার আশুলিয়া সেতুর পাশে তৈয়বপুরে নিচু এলাকায় গতকাল প্রচুর পানি জমেছিল। ওই পানি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে, এই আশঙ্কায় গতকাল মাটি ভরাট করে পানি সরিয়ে দেয় পাউবো।