Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক খানাখন্দে ভরা

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কাজ শেষ হতে না–হতেই সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। গর্তগুলো ভরাট করে কোনো রকমে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা কালভার্ট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সংস্কারকাজ পুরোটা শেষ হওয়ার আগেই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর কটকস্থল থেকে খাঞ্জাপুর পর্যন্ত পিচ ও খোয়া উঠে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। পৌনে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশে ১১টি স্থানে রাস্তা দেবে গিয়ে বড় গর্ত হয়েছে।

খানাখন্দ হওয়ার কারণে মহাসড়কটি ধরে চলাচলকারী যানচালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। আসছে বর্ষায় এই দুর্ভোগ আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহাসড়ক ধরে বরিশালের ছয় জেলায় যেতে গৌরনদীর এই অংশ অবশ্যই পার হতে হয়। চালক, যাত্রী, ঠিকাদার, প্রকৌশলীসহ এলাকার অনেকেই বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় কাজ শেষ হওয়ার আগেই মহাসড়ক আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

যানচালক আবদুল জলিল সরদার, দেলোয়ার হোসেন, স্বপন সরদারসহ কয়েকজন বলেন, সড়ক সংস্কারের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিলে সরকারি টাকা লুটপাট করেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সওজ বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গৌরনদীর আনোয়ারা হাসপাতাল থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার সংস্কার ও এর প্রস্থ ৬ ফুট বাড়ানোর জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য রাজশাহীর মেসার্স এমএসএএমপিজেভি লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে কার্যাদেশ দেয় সওজ। ২০১৭ সালের মার্চে কাজটি শেষ করার কথা। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মেয়াদ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়। টাকাও বাড়িয়ে ২২ কোটি করা হয়। কাজ এখনো শেষ হয়নি।

জানতে চাইলে সওজের বরিশাল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ বলেন, ঠিকাদারকে ইতিমধ্যে ১১ কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। তিনি এই বিলের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছেন। তবে কাজে ব্যবহৃত বিটুমিনের মান খারাপ ও বৃষ্টির কারণে সড়কের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২৫ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায়, কটকস্থল থেকে খাঞ্জাপুর পর্যন্ত পৌনে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় পুরো অংশেই খানাখন্দ তৈরি হয়ে হয়েছে। কটকস্থল, আরিফ ফিলিং স্টেশন, বার্থী হাইস্কুল, বার্থী কলেজ, ইল্লার উত্তর পাশ, খাঞ্জাপুর সরদার বাড়ির সামনে, গাইনের পাড়, ইল্লা ফিলিং স্টেশন, খাঞ্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১১টি স্থানে বড় গর্ত হয়ে সড়ক দেবে গেছে।

কটকস্থল এলাকার মো. গিয়াস উদ্দিন, আবদুর রব, ইল্লার আবদুল বারেক ও খাঞ্জাপুরের আবদুর রহিম বলেন, সড়কটি সংস্কার নিয়ে ঠিকাদার অনিয়ম, দুর্নীতি ও টালবাহানা করে যাচ্ছে, কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন ঠিকাদার ও একজন প্রকৌশলী বলেন, পুরোনো রাস্তা তুলে ফেলে (স্টেলিফাই)করার পর নতুন করে ভিত্তি (বেইজ) তৈরি করে তা ভালোভাবে পানি ও রোলার দিয়ে মজবুত করার কথা ছিল। তার ওপর দ্বিতীয় ধাপের কাজ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদার পুরোনো রাস্তার মালামাল তুলে তা দিয়ে ভিত্তি তৈরি করেছেন, যা ঠিকমতো মজবুতও করা হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে দায়সারা কাজ করায় রাস্তার এ পরিণতি হয়েছে। পরিমাণমতো বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। যা ব্যবহার করা হয়েছে, তাও ছিল খুব নিম্নমানের।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান আলীর মুঠোফোনে ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে প্রকল্পটির তদারকি কাজে নিয়োজিত মোহাম্মদ আলম বলেন, দ্বিতীয় ধাপের কাজে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় রাস্তা দেবে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ঠিক নয়।

জানতে চাইলে বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মস্তফা বলেন, ‘প্রকল্পের ৯২-৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেবে যাওয়া ও খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি ধরেছি। ঠিকাদারের লোকজনকে পুরোটা তুলে ঠিক করতে বলা হয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি নয়, ঠিকাদারের কিছুটা ভুল ও বিটুমিন জ্বলে যাওয়ার কারণে এ সমস্যা হয়েছে। শিগগিরই সমাধান করা হবে।’