Thank you for trying Sticky AMP!!

তবে কি পারুলের দেখা মিলল

ছবিটি ২২ এপ্রিল জয়দেবপুরের বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের স্কুল লাগোয়া মাঠের ধার থেকে তোলা l লেখক

কয়েক বছরের টানা অনুসন্ধান শেষে অনেকটা নিশ্চিত হই, আমাদের পরিচিত গণ্ডির ভেতরে পারুলের কোনো অস্তিত্ব নেই। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা অনেক আগেই বলেছিলেন, পারুলের সম্ভাব্য প্রাপ্তিস্থান শালবন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। পারুল স্থানীয়ভাবে কামসোনালু এবং মান্দি আদিবাসীদের ভাষায় বটচিল নামে পরিচিত। এই কয়েকটি সূত্র ধরেই মূলত পারুলের সন্ধান অব্যাহত থাকে। পাহাড়ে যাই, শালবনেও খুঁজে বেড়াই। এরই মধ্যে বৃক্ষপ্রেমিক জায়েদ আমিন মেইল করে একটি ফুলের ছবি পাঠান। গাছতলায় পড়ে থাকা ঝরা ফুল। পেশায় ব্যাংকার এই মানুষটি বৃক্ষভক্ত। তাঁর পাঠানো ছবিটি দেখে গাছের অবস্থান জানতে চাই। শালবনের কথা শুনে আমার ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়। ২২ এপ্রিল সকালে আমরা আবার গাছটি দেখতে যাই। গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের স্কুল লাগোয়া মাঠের ধারে পাঁচটি গাছ ফুলে ভর্তি। সংরক্ষিত এলাকা বলেই সম্ভবত বেঁচে আছে গাছগুলো। ফুল কুড়িয়ে শুঁকে দেখি, বেশ সুগন্ধি। ফুলের গড়ন, রং, গন্ধ—সবকিছু পারুলের সঙ্গে বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ। ছবি তুলি। ফিরতি পথে জায়েদ আমিনকে বলি, মনে হচ্ছে এটাই আমাদের পরম কাঙ্ক্ষিত পারুল!
ঢাকায় ফিরে ছবি দেখাই দ্বিজেন শর্মাকে। পরের সপ্তাহে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেও দেখাই তাঁকে। একটি নমুনা পাঠানো হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিনের কাছে। সবকিছু দেখে তাঁরা ৯০ ভাগ নিশ্চিত করেন যে এটাই পারুল। বাকি ১০ ভাগ ফল দেখার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পারুল মাঝারি আকৃতির পত্রমোচি গাছ। পত্র যৌগিক, প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা, কচি কাণ্ড ও পাতা রোমশ। ফুল ফোটে ডালের আগায়। পাপড়ি গাঢ় বেগুনি থেকে গোলাপি ও সুগন্ধি, ভেতরের অদৃশ্য অংশ হলদেটে। এপ্রিলের প্রথম ভাগে কচি পাতার সঙ্গে দু-একটি করে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফল ক্যাপসিউল, প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা, গাঢ় ধূসর বা বেগুনি লাল, অস্পষ্ট চার খাঁজযুক্ত। বংশবৃদ্ধি বীজ থেকে।
পারুলের সন্ধানে: মূলত পারুল নিয়ে অনুসন্ধান শুরু অনেক আগেই। প্রয়াত ওয়াহিদুল হক একসময় দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় অথঃপুষ্প কথা শিরোনামে বাংলা সাহিত্যে বহুল ব্যবহৃত পারুল, পিয়াল, মল্লিকাসহ আরও কয়েকটি ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। জবাবে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা তখন মস্কো থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে একটি লেখা লেখেন এবং ছুটিতে বাড়ি এসে সিলেটের পাথারিয়া পাহাড় থেকে স্থানীয়ভাবে পারুল নামে পরিচিত এমন একটি গাছের তিনটি চারা এনে ঢাকায় লাগান। চারাগুলো লাগানো হয় মহানগর পাঠাগার, শিশু একাডেমীর বাগান ও রমনা পার্কে। তত দিনে ড. নওয়াজেশ আহমদও পারুলের সন্ধানে নেমেছেন। শান্তি নিকেতনেও যান তিনি, কিন্তু পারুলের খোঁজ মেলে না। যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আমিরুল আলম খান বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিহার, মধ্যপ্রদেশসহ অনেক স্থানে পারুল খুঁজতে যান। কিন্তু পারুল অধরাই থেকে যায়। পরে তিনি ‘বঙ্গে পারুল নেই’ শিরোনামে একটি বইও লেখেন। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ বছর কেটে যায়। তত দিনে মহানগর পাঠাগারের গাছটি কাটা পড়েছে, শিশু একাডেমী ও রমনা পার্কের গাছ দুটিতে ফুল এসেছে। কিন্তু কোনোটাই পারুল নয়। শিশু একাডেমীর গাছটি ধারমারা আর রমনা পার্কের গাছটি কাউয়াতুতি। একসময় সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি পারুলের খোঁজ মেলে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই গাছটিও ধারমারা হিসেবে শনাক্ত করা হয়।