Thank you for trying Sticky AMP!!

তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান

গোলটেবিল আলোচনায় অধ্যাপক রওনক জাহান। গতকাল ঢাকার বিস মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি চলছে তা তরুণদেরই সামলাতে হবে। তরুণেরা সোচ্চার না হলে দেশের সমস্যাগুলো আরও বাড়বে। এবারের নির্বাচনে তরুণ, নারী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহিত করার মতো উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও রাজনৈতিক দলগুলোর অনীহা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্টাডিজ মিলনায়তনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮: তরুণ, নারী ও সংখ্যালঘুদের কেন ভোট দেওয়া উচিত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রওনক জাহান এসব কথা বলেন। এর আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক, রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা অংশ নেন।

রওনক জাহান বলেন, দেশটা কীভাবে চলবে, তা তরুণদের ভাবতে হবে। কেউ জায়গা করে দেবে না, তরুণদেরই নিজেদের আওয়াজ তুলতে হবে, সংগঠিত হতে হবে। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (বিওয়াইএলসি) সভাপতি ইজাজ আহমেদ। তাতে বলা হয়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যাবে না। তরুণদের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে হবে।

অব্যবস্থাপনার নির্বাচন

এত অব্যবস্থাপনার মধ্যে আগে কোনো নির্বাচন হতে দেখেননি বলে মন্তব্য করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখনো প্রার্থী বদল হচ্ছে। মার্কা বদল হচ্ছে। ইসি রাতারাতি ব্যালট ছাপাতে পারবে না। ইসি সোজা হয়ে থাকলে এসব সমস্যা হতো না। তরুণেরাই পরিবর্তন আনতে পারবে, তাই তাদের ভোট দিতে যেতে হবে।’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনী নামল, কিন্তু কিছু করল না, এটি জনগণের ভুল ধারণা। সেনাবাহিনী ঠিক সেটাই করে, তাদের যতটুকু করতে বলা হয়।

সিইসি ও সরকারি দল একই

সরকারি দল ও বর্তমান সিইসি কে এম নুরুল হুদা এক হয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা লাগাতার মার খাচ্ছে। ইসি একপেশে আচরণ করেই যাচ্ছে। সরকার ও ইসি তাদের নেওয়া পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই।

আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, সমান সুযোগ তৈরিতে ইসি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ইসির এমন ভূমিকায় তরুণেরা ভোট দেওয়া নিয়ে শঙ্কিত।

ভোট নিয়ে ভয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘সব নাগরিকের মধ্যেই ভোট দিতে পারা নিয়ে ভয় কাজ করছে। প্রার্থীদের ওপর নির্বিচারে হামলা হচ্ছে। সেনা মোতায়েনের পরে আক্রমণ ও সহিংসতা চলছে। ইসি, আদালত, সেনাবাহিনী—কেউ ঠেকাতে পারবে না, এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, পরিবেশ ভয়ের হলে ভোটাররা বিশেষ করে নারী ভোটাররা ভোট দিতে যেতে চান না। ইসি ও সরকারের দায়িত্ব ভয়ের জায়গাগুলো দূর করা।

তরুণদের ভোটের প্রস্তুতি আছে

তরুণদের এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি আছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই।

এবারের নির্বাচনে তরুণ বয়সী প্রার্থীদের কম মনোনয়ন দেওয়ায় রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সমালোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করতে হবে

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, সব নাগরিককে একই মর্যাদায় দেখলে ভোটসহ সবকিছুতে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কতজন সংখ্যালঘু দেশ ছেড়েছে সেটা বিষয় না, একজন সংখ্যালঘুও দেশ ছাড়লে তার দায় সবাইকে নিতে হবে।

সিজিএসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক হিলস স্টেট ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক আহরার আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, সিজিএসের ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক আহসান হাবিব ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ ইজাজ কবির প্রমুখ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।