Thank you for trying Sticky AMP!!

তাঁরা মধু খেয়ে চুপ থাকতেন

হাইকোর্ট ভবন

২০০২ সাল থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক, নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নর—তাঁরা ‘মধু’ খেতেন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আর্থিক খাতের অনিয়ম প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, তাঁরা মধু খেয়ে চুপ থাকতেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত শুনানিতে আদালত ওই মন্তব্য করেন। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার এ শুনানি হয়। পিপলস লিজিংয়ের ঋণখেলাপির তালিকায় থাকা ১৪৩ জনের মধ্যে ৫১ জন আদালতে হাজির ছিলেন।
এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম সমন্বয় করতে আদালত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবেন। আজ আদালতে হাজির হওয়া ঋণখেলাপিদের লিখিত বক্তব্য দিতে বলেছেন আদালত। আর আজ উপস্থিত না হওয়া খেলাপিদের প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, পরবর্তী ধার্য তারিখে হাজির না হলে পুলিশ দিয়ে ধরে আনা হবে। গত ২১ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে পিপলস লিজিং থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া ১৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুনানি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অবসায়নকালে দায়িত্ব পালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণসহ ২৮০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপিলস লিজিংয়ের পাওনা ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার বেশি।

নিয়মবহির্ভূতভাবে পিপলস লিজিংয়ের কয়েকজন পরিচালক প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নামে–বেনামে তুলে নেন। পরে তাঁরা ঋণ ফেরত না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজীব উল আলম ও কাজী এরশাদুল আলম।
আজকের শুনানিতে আদালত বলেন, যারা ঋণ নিয়ে গেছে, তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করাটা বড় কাজ। নির্বাহী ছাড়া তো প্রশাসনিক কাজ হবে না। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ বেশ কয়েকজন লাগবে। এত দিন চলে যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু করছে না। শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ও তার ওপরে ঋণ নেওয়াদের আসতে বলা হয়েছে। অন্তত এরা কোথায় কী অবস্থায় আছে, কীভাবে টাকা দিতে চায়—এই কাজটা শুরু করা হয়। এরপরেও যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের টনক না নড়ে? তারা কিছু করবে না, তা হয় না।

এক খেলাপির পক্ষে শুনানিতে তাঁর আইনজীবী বলেন, কিস্তিতে ২৭ কোটি টাকা পরিশোধে তিন বছর সময় চাওয়া হয়েছে। আদালত বলেন, যারা আমানতকারী আছে, তারা না খেয়ে আছে। তিন বছর সময় দিতে হবে কেন?
এই খেলাপি ঋণের বিষয়ে পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়কের (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) আইনজীবীর বক্তব্যের পর আদালত বলেন, ‘কোর্টের রেগুলার কাজ বাদ দিয়ে এই পি কে হালদার কী আকাম–কুকাম করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এস কে সুর কী আকাম–কুকাম করেছে—এসব ঝামেলা নিয়ে কোর্টের নিয়মিত কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো।’

আদালত একপর্যায়ে বলেন, এখানকার শেয়ারের ৮০ ভাগ শেয়ার সাধারণ মানুষের। কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে যারা শেয়ারহোল্ডার তারা ও আমানতকারীরা টাকা পাবে না। একপর্যায়ে শাহ আলমকে (বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক) চোর–ডাকাত বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

আদালত বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অবসায়ন না করে কাজ চলছে। এনআই খান (ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান) প্রায় এক শ কোটি টাকা উদ্ধার করেছেন। পিপলস লিজিংয়ে লজিস্টিক সাপোর্ট, অফিস ও অফিসার আছে। ওখানে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিও আছে। তারা কমবেশি পি কে হালদারের (বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন) কাছ থেকে সুবিধা পেয়েছে। দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তাদের জায়গায় নতুন লোক দিতে হবে। প্রতিষ্ঠান যদি টিকে থাকে, তাহলে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, তারা টাকা পাবে।

সরকারি চাকরি করতেন জানিয়ে ঋণখেলাপির তালিকায় থাকা এক ব্যক্তি আদালতে বলেন, ফোনে কথা বলেছি যাতে ঋণ না হয়। অগোচরেই শেয়ার কেনাবেচা করেছে।
শুনানির একপর্যায়ে উপস্থিত খেলাপিদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ঋণ নেওয়া টাকা কীভাবে দেবেন, কত দিনের মধ্যে দেবেন, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে।