Thank you for trying Sticky AMP!!

তামাকে কর আরোপ করে পাওয়া অর্থ করোনা মোকাবিলায় ব্যবহার করা যায়

বাজেটে তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তামাকপণ্যের ব্যবহার কমার পাশাপাশি এ খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব। এই অর্থ করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত থোক বরাদ্দ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে।

এক অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে এমন মত দিয়েছেন বক্তারা। আজ মঙ্গলবার এ সভা হয়। আয়োজন করে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা'র উদ্যোগে ২০টি তামাকবিরোধী সংগঠন। বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির তুলনায় সিগারেটের নামমাত্র মূল্যবৃদ্ধির ফলে সিগারেটের প্রকৃতমূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে।

প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটে এসব প্রস্তাব উপেক্ষিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন সভায় অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ তামাকবিরোধীরা।

তাদের মত, টানা চতুর্থ বছরের মতো সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় লাভবান হবে তামাক কোম্পানিগুলো। সিগারেটের মূল্যস্তর অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তার স্তর পরিবর্তনের সুযোগ অব্যাহত থাকবে এবং কোম্পানি করফাঁকির সুযোগ পাবে। বিড়ি এবং গুলের অতিসামান্য মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে না। বিড়ির সম্পূরক শুল্কও টানা চার বছর অপরিবর্তিত রাখায় বিড়ি ব্যবসা লাভজনক হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর আকারে আরোপ এবং সকল তামাকপণ্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের দাবি আমলে না নেয়ায় সরকার ব্যাপক পরিমাণে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। সর্বোপরি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ তামাককে করোনা সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে জোর তাগিদ দিয়ে আসলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোন প্রতিফলন নেই। ফলে দেশের প্রায় ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারীর মধ্যে মারাত্মক করোনা সংক্রমণ ঝুঁকিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝূঁকি বাড়বে।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, 'আমরা বার বার বলছি তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য তামাকপণ্যের কর ও মূল্য বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। আমাদের উন্নয়ন দর্শন এখন বাজার অর্থনীতি নির্ভর হয়ে গেছে সুতরাং জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। তবে আমরা তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলেই যাব।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বাজেট অর্থায়নে ব্যাংকিং খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো নয়। সরকারের হাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বাড়তি রাজস্ব আহরণের একটি সুযোগ রয়েছে। আমরা দেখলাম, তামাকপণ্য থেকে অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব, যা বাজেট অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

সাংবাদিক এবং টিভি টুডে'র এডিটর মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু যারা এটা বাস্তবায়ন করবেন সেই নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়ানোর সবচেয়ে বড় সুফল হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে তামাক ব্যবহার শুরু করা থেকে নিরুৎসাহিত করা। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দরিদ্র মানুষের তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্যক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য অনেক কম। সুতরাং দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকেও তামাকপণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হলে এটা তাদের জন্য উপকারই হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা না কমানো এবং গুলের দাম প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি না করায় মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহার কমবে না। অন্যদিকে, তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ না করায় তামাক কোম্পানির লাভ বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর মাহফুজ কবীর বলেন, বাজেটে তামাকপণ্যের দাম এবং করবৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়তি রাজস্ব আয়ের সুযোগ ছিল। কারণ এ মূহুর্তে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে।

অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় প্রজ্ঞা জানায়, তামাকবিরোধীদের পক্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের ৪টি মূল্যস্তরের পরিবর্তে ২টি মূল্যস্তর প্রচলন এবং সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাক্স) হিসেবে আরোপ করার দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তা তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্রান্ড বেছে নিতে পারবে, ফলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে না।