Thank you for trying Sticky AMP!!

তিনটি সরকারি হাসপাতাল বন্ধ, সেবাবঞ্চিত আট লাখ মানুষ

হবিগঞ্জে ১৬ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জেলা সদর হাসপাতাল এবং চুনারুঘাট ও লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তিনটি সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার অন্তত আট লাখ বাসিন্দা।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল ৩১ শয্যাবিশিষ্ট লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক ও দুই নার্সের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সহকারী করোনায় আক্রান্ত হলে সেখানে ২৪ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ১১ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ২৭ এপ্রিল থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট ও লাখাই উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় সাধারণ রোগের সেবা থেকেও মানুষ এখন বঞ্চিত। ফলে অনেকেই হাতুড়ে চিকিৎসক ও ওষুধ বিক্রেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে গণপরিবহন ও আন্ত–উপজেলা যান চলাচল বন্ধ থাকায় রোগীরা পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা নিতে পারছে না। ফলে অনেকেই প্রয়োজন সত্ত্বেও চিকিৎসাবিহীন ঘরবন্দী জীবন পার করছে। বিশেষত প্রসূতি ও অস্ত্রোপচার-সংক্রান্ত রোগীদের দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী মানুষ বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে চিকিৎসাব্যবস্থা পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি হাসপাতালের সেবা গ্রহণের সঙ্গে জেলার অন্তত আট লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসক ও নার্সদের চিকিৎসা হাসপাতালের ভেতরেই চলছে, তাই সাধারণ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থেই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোগীদের আমরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে হুট করেই বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান।

চুনারুঘাট উপজেলার ধনশ্রী গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক মোহাম্মদ নূরউদ্দিন (২৮) বলেন, উপজেলার একমাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপজেলা সদরের কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। তবে সেখানে প্রচুর টাকা ফি দিতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে চুনারুঘাটে যে ভার্চ্যুয়াল চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে, সেখানে গ্রামের মানুষ সঠিকভাবে সেবা নিতে পারছে না। কারণ, চিকিৎসকেরা যে ওষুধপত্রের কথা ফোনে বলছেন, তা মনে রেখে দোকান থেকে কেনাটা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কঠিন।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে হাসপাতাল তিনটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে চুনারুঘাটে মুঠোফোন, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ, অর্থাৎ ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে কয়েকজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা সদরে অবস্থিত ডায়াবেটিক হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। আর লাখাই উপজেলা যেহেতু জেলা সদরের কাছাকাছি অবস্থিত, তাই সেখানকার মানুষ হবিগঞ্জ শহরে এসেই চিকিৎসা নিতে পারবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপস্থিতি এমনিতেই এখন অনেক কমে গেছে। একেবারেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এখন কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে না। তবে হবিগঞ্জে আপাতত বন্ধ হওয়া হাসপাতালগুলোর আশপাশের বাসিন্দাদের কীভাবে বিকল্প উপায়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।’