Thank you for trying Sticky AMP!!

তিন ভাইয়ের পরিবারে চলছে শুধুই আহাজারি

লিটন শিকদার, আহমদ হোসেন ও আবদুল আজিজ (বাঁ থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবার থেকে চার সদস্য বিদায় নিয়ে নতুন এক দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। তাঁদের যাওয়ার পথে জড়িয়েছিল অনেক স্বপ্ন। ছিল পরিবারের সচ্ছলতার স্বপ্ন, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব স্বপ্নেই মিশে গেল সমুদ্রসলিলে। তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীপ্রত্যাশীদের জাহাজডুবিতে সিলেটের এক পরিবারের চার সদস্যের তিনজন নিহত হয়েছেন।

নিহত ওই তিনজনের বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর এলাকার মুহিদপুর গ্রামে। তাঁরা হলেন আবদুল আজিজ, আহমদ হোসেন ও লিটন শিকদার। তাঁদের মধ্যে চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো ভাই সম্পর্ক। নিহত ব্যক্তিদের সঙ্গে আহত ব্যক্তির সম্পর্ক চাচা-মামা। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত আবদুল আজিজের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।

ফেঞ্চুগঞ্জের নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। কিছু সময় পরপর দূর–দূরান্তের আত্মীয়স্বজনেরা এসে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আবদুল আজিজের মা আয়মানা বেগম এবং আহমদ হোসেনের মা দিলারা বেগম ছেলের মৃত্যুশোকে শয্যাশায়ী।

নিহত আবদুল আজিজের বাবা হারুন মিয়ার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ছেলে আবদুল আজিজ, ভাগনে আহমদ হোসেন, ভাতিজা লিটন শিকদার ও ভাই বেলাল আহমদ একসঙ্গে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন। নৌকাডুবিতে চারজনের মধ্যে এখন বেঁচে আছেন বেলাল আহমদ।

আজিজের বাবা আরও বলেন, ভাগ্য বদলের আশায় ইতালিতে যাওয়ার জন্য সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার ইয়াহিয়া ওভারসিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন তাঁরা। জনপ্রতি ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ভারত থেকে সরাসরি বিমানে ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। কিন্তু তাঁদের ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁদের লিবিয়া পাঠাতে আরও একটি দালাল চক্রের কাছে দেওয়া হয়। ওই দলাল চক্রটি প্রায় ছয় মাস তাঁদের ওপর নির্যাতন চালায়। এরপর চক্রটি তাঁদের কাছ থেকে আরও ১ লাখ টাকা নেয়। সবশেষ লিবিয়া থেকে ইতালিতে নিতে বড় ট্রলারের কথা বলে জনপ্রতি আরও ১০ হাজার টাকা নেয়। তবে বড় ট্রলারের পরিবর্তে তাঁদের ছোট একটি নৌকায় তোলে দালালেরা। ৩০-৩৫ জনের একটি নৌকায় জোর করে ৮৬ জনকে তোলা হয়েছিল। যে কারণে নৌকাটি ডুবে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, দালালেরা ইচ্ছা করেই তাঁদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল।

সিলেট রাজা ম্যানশনের নিউ ইয়াহিয়া ওভারসিজের পরিচালক মো. এনামুল হক ফেঞ্চুগঞ্জের নিহত ওই তিন তরুণের পরিবারের পূর্বপরিচিত। মো. এনামুল হক তাঁদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয় বলে জানায় পরিবারটি। ওই চার তরুণকে তিনি নিজের জিম্মায় ইতালি পৌঁছে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। নৌকাডুবিতে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে এনামুলের মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া, তাঁর বাড়ি ও সিলেট শহরের বাসায় তালা ঝুলছে। রাজা ম্যানশনের প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।