Thank you for trying Sticky AMP!!

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়

তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হচ্ছে

অন্তত তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ ছাড়া এই ব্যক্তিরা সনদ নিয়েছিলেন, যা বেআইনি৷ তাঁদের মধ্যে সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন৷
একই সঙ্গে জামুকা থেকে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে সনদ দেওয়ার সুপারিশ করা না হয়, তবে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও আপিল করা যাবে৷ এর জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জামুকার সুপারিশ ছাড়া সনদ দেওয়া হয়েছে—এমন ব্যক্তির সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। আর গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে সচিব থেকে শুরু করে চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেিণর সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন।

জামুকা সূত্রে জানা গেছে, জামুকা থেকে বলা হয়েছিল, বিশেষ ক্ষেত্রে বা জরুরি প্রয়োজনে যদি কারও সনদের প্রয়োজন হয় এবং সেটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে ওই ব্যক্তি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তবেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কাউকে সনদ দেওয়ার অধিকার রাখবেন। কিন্তু এ ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক, পরিচিতসহ অনেককেই শুধু আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত ও যাচাই-বাছাই না করে সনদ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, আইনে স্পষ্ট বলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেতে হলে অবশ্যই জামুকার সুপারিশ নিতে হবে। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নিজের ইচ্ছামতো যাকে-তাকে সনদ দেওয়া হয়েছে, যা আইন-বহির্ভূত। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, হাজারের বেশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জামুকার সুপারিশ ছাড়া এভাবে সনদ নিয়েছেন। যাঁরা এভাবে সনদ নিয়েছেন, তাঁদের সনদ বাতিল করার পাশাপাশি মিথ্যা তথ্যের জন্য ফৌজদারি মামলা, নিম্ন পদে পদায়ন, প্রয়োজনে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদারও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নেওয়ার সময় জামুকার সুপারিশ নেননি বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ও জামুকার মহাপরিচালক সৈয়দ মাহবুব হোসেন। জামুকার মহাপরিচালক বলেন, এই দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কোথা থেকে কীভাবে সনদ পেয়েছেন, তা তাঁর জানা নেই। তবে তাঁরা জামুকার সুপারিশ নেননি, পরিচয়ও গোপন রেখেছিলেন। মন্ত্রী বলেন, এই দুই কর্মকর্তা আবেদনের পরদিনই সনদ পেয়ে গেছেন৷
জানা গেছে, এই দুই কর্মকর্তার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে একই দিনে, ১৭ নভেম্বর। অভিযোগ আছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় আবুল কাসেমের বয়স ছিল মাত্র সাড়ে নয় বছর। তাঁর সনদ পাওয়ার বিষয়টি মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়। এ ছাড়া একই দিনে স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞাকে মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। তিনি এ বছরের ৩০ ডিসেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। তিনি চাকরিতে যোগদানের সময় না বললেও মেয়াদের শেষ সময়ে এসে জানিয়েছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই দুই কর্মকর্তা নিজেদের পরিচয় না দিয়ে আবেদন করেছিলেন, যে কারণে তাঁদের গোয়েন্দা প্রতিবেদনও লাগেনি।

আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরির বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়েছে৷ এ সুযোগ কাজে লাগাতে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহের হিড়িক পড়েছিল জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টই বলা হয়েছিল, কেউ মুক্তিযোদ্ধা হলে চাকরিতে যোগদানের সময়ই তাঁকে ঘোষণা দিতে হবে। পরে বললে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে না। কিন্তু বেশ কয়েকজন সচিবের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশিত হয় গত ৫ জানুয়ারির আগে৷ এই কর্মকর্তারা হলেন স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব খোন্দকার শওকত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব বিষয়ে তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।