Thank you for trying Sticky AMP!!

ত্রুটিপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, ঝুঁকিতে যাত্রীরা

নিচু প্ল্যাটফর্ম ও বেশি দূরত্বে ট্রেনের বগি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। গতকাল বিকেলে খুলনা রেলস্টেশনে। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন চালুর আগেই জানা গিয়েছিল, ট্রেনের বগির পাটাতন থেকে প্ল্যাটফর্ম অনেক নিচু হচ্ছে। ফলে ট্রেনে উঠতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়বেন যাত্রীরা। ট্রেনের বগি ও প্ল্যাটফর্ম যাতে সমান থাকে, এ দাবিতে রেলস্টেশন উদ্বোধনের আগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল খুলনার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও নাগরিক সংগঠন। কিন্তু সেই দাবি উপেক্ষা করেই চালু হয় স্টেশনটি।

এই রেলস্টেশনে গত শনিবার ট্রেনে উঠতে গিয়ে হাত ফসকে ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে পড়ে যান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। ট্রেনে কাটা পড়ে ​মারা যান তিনি। এই মৃত্যুর জন্য স্টেশনের ত্রুটিপূর্ণ প্ল্যাটফর্মকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন খুলনার নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।

আওয়ামী লীগ নেতা মফিদুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ড. মিজানুর রহমানের মৃত্যু আধুনিক রেলস্টেশনের ত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।’ আইনজীবী ফরিদ আহমেদ ‘ত্রুটিযুক্ত প্ল্যাটফর্মের’ কারণে এই শিক্ষকের মৃত্যুর তীব্র নিন্দা জানান। 

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার বুলবুল আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষকের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। 

গতকাল রোববার দুপুরে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের পাটাতন থেকে প্ল্যাটফর্ম প্রায় দুই ফুট নিচু। বগি ও প্ল্যাটফর্মের মাঝে প্রায় ১৪ ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা। ট্রেনে উঠতে গিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন নারী-শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষেরা। গতকাল রেলস্টেশনে কথা হয় চম্পা রানী রায়ের সঙ্গে। তিনি যশোরে ফেরার জন্য ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন থেকে ওঠা এবং নামা ভীষণ কষ্টের। লাগেজ থাকলে তো ট্রেনে ওঠার জন্য একপ্রকার যুদ্ধ করা লাগে।

রেলের প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে খুলনায় আধুনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর স্টেশনটি চালু হয়। নতুন স্টেশনে তিনতলা স্টেশন ভবন, ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে ছয়টি ট্রেন দাঁড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে বড় গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান।

এটি চালু হওয়ার আগেই ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয় বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। তাতে বলা হয়, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের বগি অনেক উঁচু হওয়ায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ট্রেনে উঠতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে, এমনকি জীবনহানির শঙ্কা রয়েছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির  মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের বগি ও প্ল্যাটফর্ম যাতে সমান থাকে, নির্মাণকাজ চলার সময়ই এ দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছিল নাগরিক সমাজ। কিন্তু সেটা মানা হয়নি। 

এ বিষয়ে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) মো. মিয়াজাহান প্রথম আলোকে বলেন, এটা ঠিক, খুলনা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম কিছুটা নিচু। সারা দেশেই প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনের উচ্চতা নিয়ে সমস্যা আছে। এ সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে।