Thank you for trying Sticky AMP!!

থানা থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে চান তিনি

থানার ‘অতিথি’ কলম্বিয়ার আমান রা

বাড্ডা থানার অতিথি কক্ষ এখন কলম্বিয়ার এক নাগরিকের আবাসস্থল। তিন দিন ধরে পুলিশ তাঁকে সেখানে রেখেছে। দিনভর তিনি সেখানেই থাকেন, খাওয়াদাওয়া করেন এবং রাত হলে ঘুমিয়ে পড়েন।

৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তির নাম আমান রা। তিনি কোনো অপরাধী নন, অবৈধভাবেও বাংলাদেশে ঢোকেননি। তবে কেন আমান থানায়? পুলিশ বলছে, মধ্য বাড্ডা এলাকায় আমান ভবঘুরের মতো ঘোরাফেরা করছিলেন। স্থানীয় লোকজন তাঁর কথাবার্তা বুঝতে না পেরে পুলিশে খবর দেয়। আমানের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে আসে। নিরাপত্তার স্বার্থেই তাঁকে থানার ওই কক্ষে রাখা হয়েছে, মন্তব্য পুলিশ কর্মকর্তাদের।
আর আমান বলছেন, ‘বন্দী’ এই জীবন থেকে মুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে চান।

দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসেনের হত্যাকাণ্ডের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গতকাল শনিবার বাড্ডা থানায় সন্ধান মেলে এই কলম্বিয়ার নাগরিকের। থানার পুলিশ সদস্যরা আমানকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে খোশগল্প করছিলেন। বিষয়; তাঁর আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস।

বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন আমান। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি মধ্য বাড্ডার শাহাবুদ্দীন মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। এলাকাটি অপেক্ষাকৃত অনিরাপদ হওয়ায় খবর পেয়ে তাঁকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাঁর এক মাসের পর্যটক ভিসা রয়েছে।

পুলিশের অনুমতি নিয়ে অতিথি কক্ষে ঢুকতেই দেখা যায়, আমান গ্যাবার্ডিন প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে শুয়ে রয়েছেন সোফায়। কক্ষের তিনটি সোফার একটি এখন তাঁর দখলে। কক্ষের জানালার গ্রিলে ঝুলছে তাঁর মোজা আর তোয়ালে।

সোফায় শুয়ে বিড়বিড় করছেন আমান। কাছে যেতেই উঠে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানালেন। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই খানিকটা উল্লসিত হয়ে স্পষ্ট ইংরেজিতে বললেন, ‘তোমাকেই আমার প্রয়োজন। তুমিই পারো আমাকে সাহায্য করতে। এরা আমাকে দুই দিন ধরে এখানে আটকে রেখেছে। বলছে কলম্বিয়ায় পাঠিয়ে দেবে।’
খানিকটা থামলেন আমান। এরপর আবার বলতে শুরু করলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। কিন্তু এরপরও কয়েক হাজার ডলার খরচ করেছি শুধু বাংলাদেশে আসতে। আর তারা (পুলিশ) এই আচরণ করছে আমার সঙ্গে।’

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় আমান। কলম্বিয়ার নাগরিক হলেও তাঁদের বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা টেক্সাসের হিউস্টনে থাকেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বেশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন বলে দাবি করেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকতাও করেছেন। ইরাক যুদ্ধের কড়া বিরোধিতা করায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০০৩ সালে তাঁকে কলম্বিয়ায় পাঠিয়ে দেয় বলে দাবি আমানের।

আমানের সঙ্গে ঘণ্টা খানেক কথা হয়। পুরোটা সময়ই তিনি নিজেকে নিয়ে কথা বলেন। ৬৮টি দেশ ঘুরেছেন বলে জানালেন। সর্বশেষ দুই মাস আগে রাশিয়া থেকে ভারতে যান। সেখান থেকে বাংলাদেশে। মাঝেমধ্যে তাঁর বক্তব্য অসংলগ্ন বলে মনে হয়। আমানের দাবি, তাঁর সঙ্গে অশরীরী শক্তির যোগাযোগ রয়েছে।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে থানার ওই কক্ষ থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুতি ছিল আমানের কথায়। তিনি বলেন, ‘রাত দুইটায় গাড়ি আমাকে নামিয়ে দেয়। পাঁচ-ছয় ডলারের হোটেল আমি যখন খুঁজছিলাম, তখন তারা (পুলিশ) আমাকে ধরে আনে। দুই দিন ধরে এখানেই সোফায় আমাকে থাকতে হয়। আমি ক্লান্ত। আমি এখান থেকে মুক্তি চাই। ঘুরতে চাই, সস্তা হোটেলে থাকতে চাই।’

আমান রা

আমানকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে পুলিশও। তাঁর খাদ্যাভ্যাস বাংলাদেশিদের মতো না হওয়ায় খাবার সরবরাহেও বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের এক সদস্য বলেন, তিনি ভাত খেতেই চান না। ফল, জুস আর বিভিন্ন রকম সালাদের কথা বলেন। থানায় এসব জোগাড় করাও কষ্টকর। নিরাপত্তার জন্য তাঁরা তাঁকে অন্য কোথাও রাখতেও পারছেন না।

আমান কি তাহলে থানায়ই থাকবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বাড্ডা অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আমানের আচরণ সন্দেহজনক। তিনি একসময় একেক কথা বলছেন। এ জন্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়াটা নিরাপদবোধ করছে না পুলিশ। তাঁর ভিসায় এক মাসের মেয়াদ থাকলেও তাঁকে কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানোর চিন্তাভাবনা চলছে। তাঁর কাছে টাকাপয়সাও নেই। সে ক্ষেত্রে হয়তো খরচটাও পুলিশকেই বহন করতে হবে।