Thank you for trying Sticky AMP!!

দর্শন ছিল তাঁর প্রথম ও শেষ ভালোবাসা

গোবিন্দচন্দ্র দেব

‘আমার নাম গোবিন্দচন্দ্র দেব।’ এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। এরপরই হানাদারের গুলি তাঁর কানের পাশে, মাথায় গিয়ে লাগে। বেশ কয়েকটা গুলি লাগে বুকে। লুটিয়ে পড়েন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক গোবিন্দচন্দ্র দেব, সবার কাছে যিনি জি সি দেব নামে পরিচিত ছিলেন।

ভীষণ মেধাবী এই মানুষের জন্ম ১৯০৭ সালে। পুরো নাম গোবিন্দচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ। ১৯৩৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান পেয়ে এমএ পাস করেন। কলকাতায় গবেষণা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে তিনি এই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উইল কসবার কলেজের অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। লন্ডনে দ্য ইউনিয়ন অব দ্য স্টাডি অব গ্রেট রিলিজিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোসফি অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই। দর্শনকে ভালোবাসতেন মনেপ্রাণে। বলতেন, ‘ফিলোসফি ইজ মাই ফার্স্ট লাভ, ফিলোসফি ইজ মাই লাস্ট লাভ।’ ১৯৮০ সালে তাঁর নামেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গোবিন্দ দেব দর্শন গবেষণা কেন্দ্র’।

জি সি দেবের পরিচতজনেরা প্রত্যেকেই তাঁকে মাটির মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন। খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন। ছাত্রাবাসের সামনেই একটা একতলা কোয়ার্টারে থাকতেন। ২৫ মার্চ রাতে মুহুর্মুহু গুলি এসে লাগতে শুরু করল ছোট্ট ঘরটাতে। সেই সময়ের কথা জানা যায় জি সি দেবের পালিত কন্যা রোকেয়া সুলতানার বর্ণনায়। ভোররাতের দিকে হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা দরজায় লাথি মারতে শুরু করে। বলে, ‘মালাউন কা বাচ্চা দরওয়াজা খোল দে।’

দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছিল হানাদার বাহিনী। ড. দেব বলেন, ‘বাবারা, তোমরা কী চাও এখানে?’ একজন সেনা কর্মকর্তা প্রশ্ন করে, ‘হোয়াট ইজ ইওর নেম?’

‘আমার নাম গোবিন্দচন্দ্র দেব।’ আর কিছু বলার সুযোগ তিনি পাননি।