Thank you for trying Sticky AMP!!

দলছুট হয়ে পড়ে গেল বিরল কালা শকুন

উদ্ধারের পর শকুনটিকে খাবার দেওয়া হয়েছে। গতকাল গাইবান্ধা সদর থানার সামনের পুকুরপাড়ে। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা সদর উপজেলার তরফকামাল গ্রামের ওপর দিয়ে গত সোমবার উড়ে যাচ্ছিল এক ঝাঁক পাখি। হঠাৎ দল থেকে একটি পাখি মাটিতে পড়ে যায়। এলাকাবাসী সেটি বেঁধে রাখেন। পরে জানা যায়, সেটি বিরল প্রজাতির কালা শকুন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তীর’-এর গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সদস্যদের সহায়তায় সোমবার সন্ধ্যায় শকুনটি উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সেটি দিনাজপুরের সিংরিয়া বন বিভাগের শকুন লালন-পালন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শকুনটির উচ্চতা প্রায় তিন ফুট, ওজন প্রায় ১০ কেজি। বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের আগে এটি সদর থানায় রাখা হয়। শকুনটি একনজর দেখার জন্য সেখানে ভিড় জমান এলাকার লোকজন। এটি বিরল প্রজাতির কালা শকুন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) কর্মকর্তারা।

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার বলেন, থানায় পাখিটিকে কয়েকটি মুরগির মাংস খাওয়ানো হয়। পরে শকুনটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়। পাখিটি সুস্থ করে তুলতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সবুর হোসেন বলেন, শকুনটি অপ্রাপ্তবয়স্ক। সেটি গতকাল বিকেলে দিনাজপুরের সিংরিয়া বন বিভাগের শকুন লালন-পালন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে শকুনটি সুস্থ করে অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে তরফকামাল গ্রামের ওপর দিয়ে একঝাঁক পাখি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ দল থেকে একটি পাখি মাটিতে পড়ে যায়। কাছে গিয়ে দেখা যায়, সেটি শকুন। স্থানীয় লোকজন ফাঁকা জমিতে সেটি বেঁধে রাখেন। পরিবেশবাদী সংগঠনটির গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সদস্যরা ঘটনাটি জানতে পারেন। তাঁরা সদর থানায় খবর দেন। পুলিশ সংগঠনটির সদস্যদের সহায়তায় শকুনটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পরিবেশবাদী সংগঠনটির কলেজ শাখার আহ্বায়ক জিসান মাহমুদ বলেন, পাখিটি উদ্ধারের পর তাঁরা ছবি তুলে ঢাকায় আইইউসিএনের দপ্তরে পাঠান। সেখান থেকে জানানো হয়, এটি বিরল কালা শকুন প্রজাতির।

জানতে চাইলে আইইউসিএনের শকুনবিষয়ক পরামর্শক মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রজাতির শকুন বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় না। ধারণা করা হচ্ছে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় দীর্ঘযাত্রার ক্লান্তি আর প্রচণ্ড শীতের কারণে দুর্বল হয়ে শকুনটি মাটিতে পড়ে যায়।

একই সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সীমান্ত দীপু বলেন, এটি কালা শকুন প্রজাতির। এটি শুধু বিরলই নয়, বিরলতম পরিযায়ী পাখি। এরা পাহাড়ের খাদে কিংবা উঁচু গাছে বাসা বাঁধে। বছরে মাত্র একটি ডিম দেয় এবং সেটি ফুটে বাচ্চা বের হয়। পৃথিবীতে দ্রুততম বিলুপ্ত হতে চলা প্রাণী শকুন। বাংলাদেশে শকুনের পরিস্থিতি খুব খারাপ। আইইউসিএনের হিসাবে বাংলাদেশে মাত্র ২৬৮টি শকুন রয়েছে। খাদ্যসংকট, বাসস্থানসংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে দেশ থেকে উপকারী পাখি শকুন হারিয়ে যাচ্ছে।