Thank you for trying Sticky AMP!!

দানবের মতো ধেয়ে আসে বাসটি

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় বাসায় গুরুতর আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে তৃষ্ণা রানি দাস। ছবি: প্রথম আলো
>
  • ২৯ জুলাই কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়
  • একই ঘটনায় ১২ জন আহত হয়
  • সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছে চার শিক্ষার্থী
  • এখনো ছয়জন আহত ছাত্রছাত্রী চিকিৎসা নিচ্ছে
  • আহত শিক্ষার্থীদের মুখে ঘটনার বর্ণনা

‘কলেজ ছুটি শেষে বাসায় ফেরার জন্য দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আমরা ১৫-২০ জন ছাত্রছাত্রী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে উড়ালসড়কের ঢালে “এমইএস” এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। প্রচণ্ড রোদ থাকায় আমরা গাছের নিচে দাঁড়াই। এ সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস আসতে দেখে থামার সংকেত দিই সবাই। বাসটি থামলে আমরা ওঠার প্রস্তুতি নিই। এরই মধ্যে আরেকটি বাস সড়কের বাঁ পাশ ঘেঁষে উড়ন্ত গতিতে ছুটে এসে উড়ালসড়কের রেলিং ঘেঁষে গাছটিকে ধাক্কা দিয়ে আমাদের ওপর উঠিয়ে দেয়। মনে হচ্ছিল মরে যাচ্ছি। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে দেখি হাসপাতালের বিছানায়। নাকে অক্সিজেনের নল।’

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় রমিজ উদ্দিন কলেজের আহত শিক্ষার্থী তৃষ্ণা রানি দাস এভাবেই ঘটনার মুহূর্তের বর্ণনা দেয় প্রথম আলোর কাছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরা চার আহত ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে গত রোববার কথা বলে প্রথম আলো। ওই হাসপাতালে এখনো ছয়জন আহত ছাত্রছাত্রী চিকিৎসা নিচ্ছে।

শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের যে চার শিক্ষার্থী হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় ফিরেছে, তারা হলো দ্বাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তৃষ্ণা রানি দাস, জয়ন্তী রানি দাস ও ইমন চৌধুরী এবং একাদশ শ্রেণির সোহেল রানা। তারা প্রায় সবাই প্রথম আলোকে বলেছে, বেপরোয়া গতিতে আসা একটি বাস তাদের চাপা দিচ্ছে—এমন দৃশ্য তারা ভুলতে পারছে না।

ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও ১২ জন আহত হয়। নিহত দুজন হলো দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম (১৬)। আহত শিক্ষার্থীদের প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দুজনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১০ জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।

ইমন চৌধুরী ও জয়ন্তী রানী দাশ

এখনো ছয়জন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা হলো দ্বাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস, সজীব শেখ, মেহেদি হাসান ওরফে সাগর, রাহাত গাজী এবং একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের রুবাইয়া আক্তার ও বিজ্ঞান বিভাগের নাইম রহমান।

সিএমএইচে আহত শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানকারী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লে. কর্নেল মো. ছগির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছয় শিক্ষার্থী এখন আশঙ্কামুক্ত।

গত রোববার দুপুরে ভাটারার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তৃষ্ণা রানি দাস হাতে ও পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে আছে। তার ডান হাত ভেঙে গেছে এবং বাঁ পায়ে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। সে জানাল, ভাঙা হাত ও বাঁ পায়ে অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। তৃষ্ণা বলল, ‘কারও আর্থিক সহযোগিতা চাই না। সুস্থ হয়ে কলেজে ফিরতে চাই আমি।’

ইমন চৌধুরীর ডান হাতের কবজিতে আঘাত লেগেছে। তার বাসা ভাটারার নুরের চালায়। ইমন বলল, ‘বাসটি আমাদের ওপর উঠিয়ে দিলে আমরা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করি। কোনো দিশা পাচ্ছিলাম না।’ ইমন জানায়, বাসের যাত্রী, আশপাশের লোকজন ও কলেজ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে বাসের তলা থেকে সবাইকে উদ্ধার করে।

জয়ন্তী রানি দাসের দুই হাঁটু জখম হয়েছে। তার বাসাও ভাটারায়। জয়ন্তী বলল, ‘ঝোড়োগতিতে আসা বাসটি দেখে দৌড়ে সরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই বাস এসে চাপা দেয়।’ দানবের মতো ধেয়ে আসা একটি বাস চাপা দিচ্ছে—এমন দুঃস্বপ্ন দেখে রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায় বলে জানায় জয়ন্তী।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহেল রানা ডান হাতের দুই আঙুলে আঘাত পেয়েছে। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের বাসায় গেলে সোহেল রানা জানায়, ‘বাসের নিচে ও আশপাশে পড়ে থাকা সবাই বাঁচার জন্য আহাজারি করছিলাম। এইটুকু মনে আছে।’

আহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের জীবন বিপন্নকারী বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তাঁরা বললেন, এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে আর কোনো চালক পাল্লা দিয়ে বাস চালানোর সাহস না দেখান।