Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র তৈরি

>চলন্ত মাইক্রোবাসে আদিবাসী তরুণী ধর্ষণ

রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসে আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণের মামলায় দুজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র তৈরি করেছে তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। এই দুজন হলেন আশরাফ খান ওরফে তুষার ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে লাবলু। 

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, দুই আসামির পরিচিত খোকন ও ফিরোজকে এই মামলার প্রধান সাক্ষী করা হচ্ছে। তাঁরা গারো ওই তরুণীকে ধর্ষণের পরিকল্পনার বিষয়টি জানতেন।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে আশরাফ খান ও জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁরা দুজনেই গুলশান ১ নম্বরে অবস্থিত একটি বায়িং হাউসের গাড়িচালক। এই দুজনকে আসামি করে দ্রুততম সময়ে আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে।
ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কের একটি দোকানের কর্মচারী। তিনি গত ২১ মে রাতে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে কুড়িল থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে ওই থানার পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাব-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার আজমিলা নাসরিন চৌধুরীকে। অভিযুক্ত দুজনেই কারাগারে আছেন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার আগে র‌্যাব ছায়া তদন্ত করে। তখন আশরাফ ও জাহিদুলের বিরুদ্ধে আদিবাসী ওই তরুণীকে মাইক্রোবাসে ধর্ষণের তথ্যপ্রমাণ পায়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ২৬ মে রাতে র্যাব পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে আশরাফকে এবং তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ভোরে রাজধানীর গুলশান থেকে জাহিদুলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনার সময় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি বনানী থেকে জব্দ করা হয়। আশরাফের গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলী থানার চুনখালীতে। জাহিদুলের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া থানার তালতলায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজমিলা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, খুঁটিনাটি দিক ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আসামিদের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। দ্রুততম সময়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় গারো তরুণীকে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। ওই তরুণী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, আশরাফ ও জাহিদুল তাঁকে ধর্ষণ করেন। আশরাফ ও জাহিদুলও আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের পূর্বপরিচিত গাড়িচালক মো. খোকন ও ফিরোজ ধর্ষণের পরিকল্পনার বিষয়টি জানতেন। তাই এই দুজনকে মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হচ্ছে। মামলায় মোট সাক্ষী করা হচ্ছে ১২ জনকে।
এই মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ না করে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছিল। অভিযোগপত্রে দুজনকে আসামি করা সম্পর্কে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, মামলা করার সময় মেয়েটি ছিলেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাঁর স্বজনেরাই মামলা করার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন। স্বজনেরাই হয়তো মেয়েটির কাছ থেকে ভালো করে না শুনেই পাঁচজনের বিরুদ্ধে এজাহার দিয়েছিলেন। তদন্তে দুজনের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণই পাওয়া গেছে।
সূত্র বলেছে, গারো ওই তরুণীকে ভালো বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন আশরাফ। তরুণীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁর পরিচিত জাহিদুল ও ফিরোজের সঙ্গে আলাপ করেন। বিষয়টি জানতেন তাঁদের পরিচিত খোকনও। মেয়েটিকে ২১ মে রাতে জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে আসতে বলা হয়। মেয়েটি সেদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে কর্মস্থল থেকে বের হওয়ার পর আশরাফ ও জাহিদুল তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার অজুহাতে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। পরে তাঁরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে উত্তরায় তাঁর বাসার কাছাকাছি স্থানে নামিয়ে দেন।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রথম আলোকে বলেন, গারো ওই মেয়েটির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। মেয়েটি ধর্ষক আশরাফ ও জাহিদুলকে শনাক্ত করেছেন। এই দুই ধর্ষকের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।